দুটি পুকুরে মাছ চাষ করেন মারমী গ্রামের সুজন দেওয়ান। তিনি জানান, মাছ চাষের পাশাপাশি কলা, পেঁপে, বেগুন ও শিমের আবাদ করেছেন। বিষমুক্ত এসব সবজি পরিবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে মাছ চাষের খরচ তুলেছেন।
পুকুরে যারা মাছ চাষ করেন; তারা যদি পুকুরপাড় ফেলে না রেখে সবজি ও দেশীয় ফল আবাদ করেন, তাহলে ফল-মূল বিক্রি করে মাছ চাষের খরচ কমে যাবে।
পুকুরপাড়ে সবজি ও দেশীয় ফলের আবাদ করে পাবনার ঈশ্বরদীর মাছ চাষিদের ভাগ্য বদলে গেছে। মাছ চাষের ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ লভ্যাংশ আসে পুকুরপাড়ে সবজি ও দেশীয় ফল-মূলের আবাদে।
পাবনার ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ও মুলাডুলি ইউনিয়নের প্রায় ৬ শতাধিক পুকুরপাড়ে মাছ চাষিরা পরিকল্পিতভাবে সবজি ও দেশীয় ফলের আবাদ করছেন। দাশুড়িয়া ও মুলাডুলি ইউনিয়নের প্রায় ১০ গ্রামজুড়ে পদ্ম ও চামগড়া বিল। বছরজুড়েই জলাবদ্ধতার কারণে এ বিলের বেশিরভাগ জমিতে একসময় কোনো ফসল ফলতো না। বিলের অল্প জমিতে ফসল হলেও সেগুলো এক ফসলি জমি। তাই এসব জমিতে যারা পুকুর খনন শুরু করেন।
বিলগুলো ঘুরে দেখা যায়, বিশাল বিলের যতদূর চোখ যায়, সবুজের হাতছানি। পুকুরপাড়ের মাচায় ঝুলছে লাউ, কুমড়া, শসা, ঝিঙা, শিম, বরবটি, পুঁইশাক। পাশাপাশি ঢ্যাঁড়শ, করলা, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি চাষ হচ্ছে। এ ছাড়াও পুকুরপাড়ে দেশীয় কলা ও পেঁপের ব্যাপক ফলন হয়েছে।
মাত্র দশ বছরের ব্যবধানে দুই বিলে প্রায় ছয় শতাধিক পুকুর খনন করা হয়। পুকুরের পাড় চওড়া করে তৈরি করা হয়, যাতে সবজি ও দেশীয় ফলের চাষ করা যায়। ‘ফসলি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন করে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্থ করা হচ্ছে’-এ ধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন মাছ চাষিরা। মাছের পাশাপাশি সবজি ও ফল চাষ করে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পুকুরপাড়সহ আবাদযোগ্য কোনো জমি যেন পতিত না থাকে। সেজন্য মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা তৎপর। কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তারা পুকুরপাড়, বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত জমিতে ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন।
দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম মাঝি জানান, ‘মারমী, শ্যামপুর, সুলতানপুর, হাতিগড়াসহ ১০ গ্রামের মধ্যবর্তী পদ্ম ও চামগড়া বিলজুড়ে প্রায় ৬০০ পুকুর। এসব পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি পুকুরপাড়ে সবজি চাষ করে চাষিদের দিন বদলে গেছে। এখন তারা স্বাবলম্বী।’
উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা জানান, ২০১৭-১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী এ উপজেলায় পুকুর আছে ২,৪৭৬টি। বর্তমানে পুকুরের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা এসেছে। তাই পুকুরের পাড়ে সবজি ও দেশীয় ফলের চাষাবাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সুফল পাওয়া গেছে।
কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, আবাদযোগ্য সব জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। উপজেলার প্রতিটি পুকুরের পাড় যেন চাষাবাদের আওতায় আনা হয়, সেজন্য কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন।