নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী আজ রবিবার বিকেল ৪টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে শুরু হওয়া সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটবে। জানা যাবে কে হচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। একাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীই হবেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, শনিবার পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদের জন্য কেউ মনোনয়নপত্র নেননি। কেউ চাইলে অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। তবে সাধারণত এই পদের জন্য কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এ জন্য নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ছুটির দিন শুক্র এবং শনিবারও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ‘নির্বাচনী কর্তা’ কাজী হাবিবুল আউয়ালের দুই সহকারী কর্মকর্তা ইসির যুগ্ম সচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ-২) ফরহাদ আহম্মদ খান ও উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান অফিস করেছেন, যাতে কেউ মনোনয়নপত্র নিতে বা জমা দিতে পরেন। তফসিল ঘোষণার পর ছুটির দিনও নির্বাচন কমিশন দপ্তর খোলা রাখার আইনি বিধান রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (নির্বাচনী কর্তা) কার্যালয়ে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করা যায়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন অনুযায়ী, কোনো সংসদ-সদস্য রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তিকে ওই পদের জন্য মনোনীত করে নির্বাচনী কর্তার কাছে একটি মনোনয়নপত্র দিতে পারবেন। প্রস্তাবক হিসেবে সেই সংসদ সদস্যম মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করবেন। একইভাবে ওই ফরমে অপর একজন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষর সমর্থক হিসেবে থাকতে হবে। রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত ব্যক্তির স্বাক্ষরও থাকবে সেই মনোনয়ন ফরমে।
গত কয়েকদিন ধরে কয়েকটি নাম নিয়ে বেশ আলোচনা হলেও তাদের মধ্য থেকে আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দেবে তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। এমনকি বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের কারো সঙ্গে এখনো কোনো আলোচনা করেননি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্র বলছে, বিভিন্ন দিক থেকে একাধিক প্রস্তাব আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসেছে। এজন্য সুনির্দিষ্ট কোন নাম নিয়ে তিনি কারো সঙ্গে কোন ধরনের আলোচনা করেননি বলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় দলের এমপিরা এই দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দেন। তাই রাষ্ট্রপতি হিসেবে দল থেকে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।
ঘুরেফিরে আলোচনায় চারজনের নাম
রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, রাষ্ট্রপতি পদে তার মনোনয়ন ঘোষণার শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। ড. মসিউর রহমান আওয়ামী লীগ সভাপতির অত্যন্ত আস্থাভাজন একজন ব্যক্তি। আলোচনায় রয়েছে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নামও। দুই মেয়াদে দায়িত্বপালনকারী বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদও রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আলোচনায় আছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নাম। ছয়বারের সংসদ সদস্য প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ স্বচ্ছ নেতা হিসেবে সব মহলে পরিচিত। এছাড়া আলোচনায় রয়েছে দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের নাম। গত একাদশ নির্বাচনে সপ্তমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন দিনাজপুর-৫ আসন থেকে। এছাড়া সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নামও আছে রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায়।
সাংবিধানিক বিধি অনুযায়ী আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নতুন কাউকে শপথ নিতে হবে। আইনে দুই মেয়াদের যে সীমা বেঁধে দেওয়া আছে সেই অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোঃ আবদুল হামিদের দুই মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল। তাই তিনি আর এই পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৭ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ১৮তম ব্যক্তি দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। সংবিধানের ১২৩(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মেয়াদ শেষে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হওয়ার ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এবার গত ২৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দুই মেয়াদে রয়েছেন। তাই তিনি আর প্রার্থী হতে পারবেন না। সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য একবার সংসদের কক্ষে ভোট হয়েছিল। পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
আগামীকাল রবিবার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে। পরের দিন হবে বাছাই। একাধিক প্রার্থী না থাকলে আগামীকাল সোমবারই জানা যাবে কে হবেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।
৩৫ বছরের বেশি বয়সী এবং এমপি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন যে কেউ রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে পারবেন। তবে লাগবে একজন এমপির প্রস্তাব এবং অপর একজন সংসদ সদস্যের সমর্থন। একাধিক প্রার্থী থাকলে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি এমপিদের ভোটে নির্বাচিত হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি।