>কলেজছাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘টেলিভিশন কিংবা ক্যালেন্ডারের পাতায় দেখেছি বিদেশে সড়কের পাশে নানা রঙের ফুলে সাজানো থাকে। এখন তেমন দৃশ্য আমাদের নিজেদের এলাকায় দেখতে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। দাশুড়িয়ার খুব কাছেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। সেখানে হাজার হাজার বিদেশি কাজ করে। তারাও এখন এই বাগানের প্রশংসা করছে। ছবি তুলছে। এটি আমাদের সম্মানও বাড়িয়ে দিয়েছে।’<
ফুলে ফুলে সেজেছে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সংযোগস্থল পাবনার দাশুড়িয়া মহাসড়ক বিভাজক। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের নান্দনিক ফুলের বাগানে সৌন্দর্য্যবর্ধনের পাশাপাশি কমেছে সড়ক দুর্ঘটনাও।
সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া মোড়ের বাইবাস গোলচত্বর, দেশের উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গে সড়ক যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। প্রতিদিন এ সড়কে বিভিন্ন পরিবহনে যাত্রী ও মালামাল পরিবহণ করা হয়। বেশ কয়েক বছর আগে গোলচত্বরের মাঝে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করে সড়ক বিভাগ।
তবে স্থানীয়দের অবহেলা ও অসচেতনতার কারণে গোলচত্বরটিতে ময়লা আবর্জনায় ভরে থাকত, এর পাশাপাশি অনুমতির তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক বিলবোর্ড, ফেস্টুন, ব্যানারে ঢেকে থাকত পুরো এলাকাটি।
এতে যাত্রীদের চলাচলে অসুবিধার পাশাপাশি চালকেরা বিপরীত দিকের যানবাহন দেখতে না পাওয়ায় প্রায়ই ঘটত সড়ক দুর্ঘটনাও। বারবার চেষ্টা ও স্থানীয়দের অনুরোধ করেও এর কোনই প্রতিকার করতে পারছিলেননা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা।
একপর্যায়ে পাবনা সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সমীরণ রায়ের পরিকল্পনায় সেখানে দেশি-বিদেশি নানা ফুলের সমারোহে ফুলের বাগান গড়ে তোলেন সড়ক বিভাগের কর্মীরা। বাগানের নান্দনিক সৌন্দর্য্যে পথচারী ও দূর-দুরান্তের যাত্রীরা যেমন মুগ্ধ হচ্ছেন তেমনি স্থানীয়দের মধ্যেও এসেছে সচেতনতা।
আজ মঙ্গলবার সকালে পাবনা-রাজশাহী-কুষ্টিয়া মহাসড়কের দাশুড়িয়া বাইপাস গোলচত্বরের কাছাকাছি যেতেই পাওয়া গেল নানা রঙের ফুলের মিষ্টি সুগন্ধ। গাঁদা, গোলাপ, পিটুনিয়া, লিলিসহ নানা ফুলের বর্ণিল সমারোহে চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্য দেখে মনে হয়, যেন শিল্পীর নিপুন তুলিতে আঁকা বর্ণিল ক্যানভাস।
স্থানীয়রা জানান, মোড় এলাকার বিরাট অংশ জুড়ে ছিল ময়লার স্তূপ। এতে মূল সড়কই সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। ফুটপাতে ছিল গ্যারেজ। লোকজন হাঁটার জায়গা পেত না। বাতাসে মিশে থাকত দুর্গন্ধ। অসহনীয় জলাবদ্ধতা ছিল। নিত্যদিন যানজট লেগেই থাকত। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ ছিল না পথচারী ও সাধারণ মানুষের। সওজের ‘জাদুকরি’ উদ্যোগ বদলে দিয়েছে দৃশ্যপট।
ঈশ্বরদীর মিরকামারী গ্রামের অটোরিক্সা চালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘একসময় এ স্থানে ছিল জলাবদ্ধতা, প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট, ময়লা-আবর্জনায় চারপাশ ছিল ভরপুর। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ ছিল না পথচারী ও সাধারণ মানুষের। কিন্তু আজ সেখানে ফুটেছে নজরকাড়া সৌন্দর্য। গোলচত্বরকে আধুনিকায়ন করে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের চারপাশে দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান। দুর্ভোগের স্থানে এখন অন্যরকম ভালো লাগা।’
দাশুড়িয়া ডিগ্রীপাড়া মহল্লার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আগে এ সড়ক দিয়ে যেতে খারাপ লাগত। কেমন যেন রুক্ষ পরিবেশ ছিল। আর এখন খুব ভালো লাগে। ফুলের সৌন্দর্য্য মনটা কেড়ে নেয়। বিকেলে এই ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসেন অনেকেই।’
কলেজছাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘টেলিভিশন কিংবা ক্যালেন্ডারের পাতায় দেখেছি বিদেশে সড়কের পাশে নানা রঙের ফুলে সাজানো থাকে। এখন তেমন দৃশ্য আমাদের নিজেদের এলাকায় দেখতে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। দাশুড়িয়ার খুব কাছেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। সেখানে হাজার হাজার বিদেশি কাজ করে। তারাও এখন এই বাগানের প্রশংসা করছে। ছবি তুলছে। এটি আমাদের সম্মানও বাড়িয়ে দিয়েছে।’
পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আমান উল্লাহ বলেন, ‘মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে একটি নির্দেশনা ছিল জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সুসজ্জিত করা। তখন থেকেই আমরা এ কাজ শুরু করি। সড়কপথে উত্তর-দক্ষিণ বঙ্গের মিলনস্থল দাশুড়িয়া গোলচত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন ও ফুলের বাগান তৈরি করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের সাড়া পাওয়ায় এ বছর পরিসর আরও বাড়ানো হয়েছে।
‘সড়ক সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে যাত্রী ও চালকদের মনে শান্তি আনার চেষ্টা করা হয়েছে। বিলবোর্ড সরিয়ে দেয়ায় সড়ক দুর্ঘটনাও অনেক কমে এসেছে। ভবিষ্যতেও জেলার অন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এভাবে নান্দনিক বাগানের মাধ্যমে সৌন্দর্য্যবর্ধন করার পরিকল্পনা রয়েছে।’