বৃহস্পতিবার , ৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. নির্বাচন
  14. পাবনা
  15. ফিচার

ঋণের দায়ে পদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষকের গৌরবের পথচলায় পড়েছে ছেদ

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
ডিসেম্বর ৮, ২০২২ ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
ঋণের দায়ে পদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষকের গৌরবের পথচলায় পড়েছে ছেদ

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর ১৬ জন সফল কৃষকের বর্তমান অবস্থা কেমন তা জানার আগ্রহ অনেকেরই। ইতোমধ্যে কয়েকজন সফল কৃষকের জীবনে এক সময়ের জৌলুস ও গৌরবের পথচলায় অনেকটাই ছেদ পড়েছে। ব্যাংক ঋণের যথাযথ ব্যবহার না হওয়া অন্যতম কারণ হলেও এসব কৃষকরা ব্যাংকের অসহযোগিতা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে দায়ী করেছেন।

আলোচিতদের অন্যতম সিদ্দিকুর রহমান ওরফে ময়েজ এর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল ‘কুল ময়েজ’ হিসেবে। স্বশিক্ষিত এই কৃষক বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করে কুলবাগানে ফুলের পরাগায়ন বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে ২০১০ সালে কৃষিতে সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পান। ময়েজ উদ্দিন (৫৪) এখন সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নিজের কেনা জমি ও ঘরবাড়ি ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ। ঋণখেলাপির মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। কয়েক বছর আগেও ঋণের টাকায় কেনা গাড়ি নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন।

জাতীয় পদকপ্রাপ্ত নিঃস্ব হওয়া চাষিদের মধ্যে আরও রয়েছেন আবদুল জলিল ওরফে কিতাব মন্ডল, ‘লিচু কিতাব’ নামে পরিচিত। জাহিদুল ইসলাম ‘গাজর জাহিদ’ এবং হাবিবুর রহমানের নামটিও ‘মাছ হাবিব’ নামে পরিচিত।

এসব সফল কৃষক নিজেদের প্রচেষ্টায় পদকপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। অতি দ্রুত ধনী হয়ে ওঠার নেশা তাদের পেয়ে বসে। ব্যাংক ঋণ নিতে শুরু করেন দৌড়ঝাঁপ। ব্যাংকও ঋণ দেয় বড় অঙ্কের টাকা। ঋণ নিয়ে অন্যের জমি লীজ নিয়ে চাষাবাদ বাড়িয়ে, খামারে বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়েছেন। নিজেদের
অপরিকল্পিত সংকটকে তাঁরা ফসলের ভালো দাম না পাওয়া ও ব্যাংকের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন। ফসলের ভালো দাম না পাওয়ার পেছনে বিগত সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতাকেও তাঁরা দায়ী করছেন।

তবে কৃষিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২-৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া এসব কৃষকের ঋণের বিপরীতে গড়া খামার ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা ও প্রশিক্ষণ ছিল কি না এগুলো বিবেচনা করা হয়নি। ঝুঁকি নিরসনের ব্যবস্থা স্বরূপ সুরক্ষার জন্য বীমা ছিল কি না এসবও বিবেচ্য বিষয়। পদকপ্রাপ্ত ঋণখেলাপী ঈশ্বরদীর ৪ কৃষকের এসব সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না।

জাতীয় পদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীতে মোট ১৫ জন কৃষক রয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের দাবি, দেশের আর কোনো উপজেলায় পদক বিজয়ী এতো চাষি নেই। স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই চারজন ছাড়া পদকপ্রাপ্ত অন্যরা ভালোই আছেন। বেশির ভাগই চাষাবাদ অথবা খামার মাঝারি পর্যায়ে রেখেছেন। বড় অংকের ঋণ তাঁরা নেননি। বিপাকে রয়েছেন ওই চারজন। ধনী কৃষক কিতাব মন্ডল বলেন, সফল লিচুচাষি ছিলাম। গরুর খামার করার জন্য আমাকে ঋণ না দিয়ে মেরে ফেলাই ভালো ছিল।

ময়েজ উদ্দিনের বাড়ি উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। কুল চাষে পরাগায়ন বাড়াতে তিনি যে কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন, সেটি হলো নাইট্রোজেন নিয়ন্ত্রণ।
সফল লিচুচাষী হিসেবে ২০০৯ সালে জাতীয় ফল পদক পান আবদুল জলিল ওরফে কিতাব মন্ডল (৫৪)। উপজেলার মীরকামারী গ্রামের কিতাব চাষি হিসেবে ভালই ছিলেন। এখন তাঁর লিচুবাগান নিলামে উঠেছে।

কিতাব মন্ডল বলেন, ২০১০ সালে ২০০ গরুর খামারের জন্য অগ্রণী ব্যাংক তাঁকে প্রকল্প ঋণ নিতে উৎসাহিত করে। তিনি খামার করার পর ব্যাংক শেষ পর্যন্ত ঋণ দেয় মাত্র ৭৫ লাখ টাকা। তাও কিস্তিতে এবং দেরি করে। এর মধ্যেই গ্রেস পিরিয়ড (ঋণ নেওয়ার পর যে সময়টুকু কিস্তি দিতে হয় না) শেষ হয়। তখন ব্যাংক তখন কিস্তি দাবি করে। ফলে তিনি এখন কঠিন সংকটে নিপতিত।

ভাড়ইমারী গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পান। গাজর চাষের মুনাফা থেকে তিনি ৩০ বিঘা জমি কেনেন। সেই জমিতে গরুর খামার করেন। খামারে ১৭৫টি গরু ছিল। খামারের জন্য ২০১২ সালে তিনি ৫ কোটি টাকা ব্যাংক হতে ঋণ নেন ।

জাহিদুল বলেন, দুধের ভালো দাম না পাওয়ায় খামারের আয় দিয়ে ঋণ শোধ করতে পারেননি। ঋণখেলাপি হওয়া ও চেক প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় ব্যাংক মোট আটটি মামলা করেছে। এখন ঢাকায় মামলার হাজিরা দিতেই জীবন শেষ।

মুলাডুলির হাবিবুর রহমানের (৫৬) বাড়িঘর, খামার-সব নিলামে উঠেছে। ১১টি মামলা তাঁর নামে চলমান। তিনি জানান, ২০১০ সালে জাতীয় মৎস্য পুরস্কার ও ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার অর্জন করেন। খামারে ২শ’ গরু ছিল, ৫০ বিঘা আয়তনের পুকুরে মাছ ও পাঁচ হাজার মুরগি ছিল। ২০১২ সালে তিনি ঋণে জড়িয়ে পড়েন। খেলাপি হিসেবে ২০২১ সালে ব্যাংক তার বিরুদ্ধে মামলা করে দেয় তাঁর সম্পদও এখন অকশনে ওঠেছে।

অগ্রণী ব্যাংকের ঢাকা প্রিন্সিপাল অফিস হতে ময়েজ উদ্দিন ও কিতাব মন্ডল ঋণ গ্রহন করেন। আর হাবিবুর রহমান ও জাহিদুর ইসলাম মিউচ্যুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংকের ঈশ্বরদী শাখা হতে ঋণ গ্রহন করেন। বাংকের অপারেশনাল ম্যানেজার জামিলুর রহমান জানান, তারা ঋণ নিয়ে যথাযথ ব্যবহার করেননি। যথাযথভাবে বিনিয়োগ না করায় এরা সময়মতো রিটার্ণ দেননি। মাছের খামার, ডেইরি ফার্ম, বায়োগ্যাস প্লান্টের কথা বলে ঋণ নিলেও হয়ত: এক ফান্ডের টাকা অন্য কোথায়ও বিনিয়োগ করেছে। ২০১৯ সালের আগেই এরা খেলাপি হয়েছেন। করোনার কারণে রিটার্ণের সুযোগ দেয়া হলেও সুযোগের সদ্ব্যবহার হয়নি। যেকারণে এদের মর্টগেজ অকশনে উঠেছে।

ব্যাংক ঋণ নেয়ার পর এসব চাষীদের পকেট গড়ম থাকায় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের খুশি রাখতে প্রায়শ:ই উপঢৌকন দেয়ার ঘটনা স্থানয়িরা অনেকেই প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তুকেউই এখন তাদের পাশে নেই। আলোচিত চারজন চাষি পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন।

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

দুঃখিত,এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি করা নিষিদ্ধ