আইনের তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে চলছে ঈশ্বরদীর লক্ষীকুণ্ডার অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ইট পোড়ানোর লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিসের সার্টিফিকেট এমন কি ভ্যাট-আয়কর প্রদানের কাগজপত্র ছাড়াই ইটভাটার মালিকরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করে ২৪ ঘণ্টা ইট পোড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
কৃষিজমি বিনষ্ট করে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ ইটভাটা দীর্ঘদিন ধরে কীভাবে চালু রয়েছে, এ বিষয়ে বিশিষ্টজনরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ভাটার ইট পরিবহনের কারণে লক্ষীকুণ্ডা ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী সাহাপুর ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
পদ্মা নদীর তীরে ঈশ্বরদীর লক্ষীকুণ্ডায় গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা। লক্ষীকুণ্ডার কামালপুর, দাদাপুর ও বিলকেদার গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কৃষি জমির উপর গড়ে ওঠা এসব ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ভাটা নির্মাণের জন্য চিমনীর উচ্চতা ও আনুষঙ্গিক যে নির্দেশনা রয়েছে তা অধিকাংশ ভাটা মালিকরা মানেননি। এখানে ৫০টি অটোফিস এবং ২টি জিকজ্যাক (হাওয়া) ভাটা রয়েছে। অটোফিস ভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। এসব ভাটা দিয়ে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়ে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আশেপাশের এলাকায় অবাধে নিধন হচ্ছে গাছপালা। ভাটার মালিকরা ইট তৈরির জন্য অবৈধভাবে পদ্মার চরের ফসলী জমি হতে মাটি সংগ্রহ করে থাকে। এসব ভাটার মালিকরা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স কিছুই দেয়না বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘লিখে কি করবেন। সকলকে ম্যানেজ করেই বছরের পর বছর চলছে অবৈধ ইটভাটা। অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায়, আইওয়াশ ছাড়া কিছু নয়। ভাটা ভেঙে গুড়িয়ে না দিলে বন্ধ হবে না।’
লক্ষীকুণ্ডা ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরীফ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এসব ভাটা ট্রেড লাইসেন্স নিলেও এখন আর নবায়ন করে না। বর্তমানে এসব ভাটার ট্রেড লাইসেন্স বা ইউনিয়ন পরিষদের কোনো ছাড়পত্র নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।
ইটভাটা মালিকদের সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তারা কথা বলতে রাজি হননি।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানান, বিপুল সংখ্যক ইটভাটা গড়ে উঠায় লক্ষীকুণ্ডায় কৃষি জমির পরিমাণ কমে গেছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়া আম-লিচু-কাঁঠালের বাগান এবং ফসলি জমির উপর প্রভাব পড়ছে। দূষণের প্রভাবে স্বাভাবিক জনজীবন হুমকীর সম্মুখীন হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবীর বলেন, ইটভাটার ইট ও ড্রামট্রাকে বালু পরিবহনের ফলে ওই এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা শোচনীয়। নতুন করে রাস্তা নির্মাণ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এসব পরিবহন চলাচল বন্ধ না হলে নতুন রাস্তা নির্মাণ করেও লাভ হবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েস জানান, এসব অবৈধ ইটভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর ফলে পরিবেশ দূষণ এবং ফসলের উপর প্রভাব পড়ছে। উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ১০ ডিসেম্বর অভিযান চালিয়ে ৬টি ভাটার মালিকের নিকট থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।