বিএনপি আবারও ধরা খাবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খেলা হবে নির্বাচনে, খেলা হবে রাজপথে।
বুধবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি বলে, আওয়ামী লীগের পায়ের তলায় নাকি মাটি নেই। এই যে জনতার ঢল, শেখ কামালের মাজারে, বঙ্গমাতার মাজারে, বঙ্গবন্ধুর মাজারে, টুঙ্গিপাড়ায় সেই জনতার ঢল। বিএনপি এই জনতার ঢল কোনোদিনও দেখেনি। গতবার জগাখিচুড়ি করে ধরা খেয়েছে, এবারও খাবে। বিএনপি ধরা খাবে। আবারও ধরা খাবে। সময় ঘনিয়ে আসছে।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ২০০৬ সালের সঙ্গে আজকে ২০২২ সালের তুলনা করেন। ২০০৬ সালে বিএনপির বাজেট ছিল ৬৯ হাজার কোটি টাকা। আজকে শেখ হাসিনার বাজেট হচ্ছে ৬ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। কিসের সাথে কী মেলাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘গত দুইদিন ধরে মির্জা ফখরুল একটা মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। আজ আপনাদের সামনে বলতে চাই, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাশেলে বাংলাদেশে এসেছেন। আজকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মির্জা ফখরুল, এখনো শিক্ষা হয় নাই। জাতিসংঘের দ্বারে দ্বারে ঘুরে প্রধান কোনো কর্মকর্তাদের দেখা দেওয়ার সুযোগ পাননি। ওই নিচের দিকের কেরানীদের সঙ্গে বৈঠক করে নালিশ করে এসেছে। বিএনপির নাম কি, বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। নালিশ পার্টির কাম কি, বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করা। এই নালিশ পার্টি সন্ধ্যার পরে দেখবেন বিদেশি দূতাবাসে ঘুরে। ফখরুলের চোখের পানি, নাকের পানি এক হয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতায় বসতে চায়, সেই ময়ূর সিংহাসনে।’
কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্ত করার সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফখরুল সাহেব আপনি বোধহয় জানেন না আপনি যে নালিশ করেছেন, তা বিচার করার এখতিয়ার নেই মিশেল ব্যাশেলের। জাতিসংঘের নিয়ম কানুন কি জানেন? জাতিসংঘের কাছে তদন্ত কমিটি করতে বলেছেন। জাতিসংঘের কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তদন্ত করার কোনো এখতিয়ার নেই।’
নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা কষ্ট মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘সময় আসছে। আমি শুধু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বলব, আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। এই নগরীতে আওয়ামী লীগের এত ইউনিট-কমিটি। হাজার হাজার নেতা কেন মঞ্চমুখী। আপনারা কর্মীদের সাথে বসেন। নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা কষ্ট। সবাই নেতা হয়ে গেছেন। স্টেজে মনে হয় দুই হাজারের মতো লোক আছে। এটা যেন আর না হয়। নেতা একজন, তিনি শেখ হাসিনা আর আমরা সবাই কর্মী। কর্মীরা পোস্টার লাগাবে, লিফলেট বিতরণ করবে। আওয়ামী লীগ মাটির দল, মানুষের দল। আওয়ামী লীগ বন্দুকের নল থেকে জন্ম নেয়নি। আওয়ামী লীগ জন্ম নিয়েছে এ দেশের মানুষের মাঝ থেকে।’
রিজার্ভ নিয়ে এখন রিকশাওয়ালারাও কথা বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার সততা থেকে শিক্ষা নিন, বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে শিক্ষা নিন। আজ বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যাচার অপপ্রচার চলছে। অবাক লাগে, এখন রিজার্ভ নিয়ে রিকশাওয়ালারাও আলাপ করে। রিজার্ভ নিয়ে কথা বলতে বলতে বিএনপির মুখে ফেনা উঠে গেছে। শ্রীলঙ্কার অবস্থা শূন্য, পাকিস্তানের অবস্থাও খারাপ। বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কা হবে না। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ কখনো পাকিস্তান হবে না। আমাদের রিজার্ভ এখন ৪০ থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে উঠানামা করছে। আপনারা বাংলাদেশকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমরা যখন ঘুমাই, তখন শেখ হাসিনা জেগে জেগে রাত কাটান। আমরা যেন ঘুমাতে পারি, সেজন্য তিনি জেগে থাকেন। আমি বলব আপনার ঐক্যবদ্ধ হন।’
বিএনপিকে রুখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বোমাবাজি-গ্রেনেডবাজির দিন শেষ। আগুন সন্ত্রাস করে ক্ষমতায় আসার দিন শেষ। আপনারা অনেক দেশপ্রেমিক বীরের রক্তে হাত রঞ্জিত করেছেন। বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের ঠিকানা বিএনপি, তাদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি। এদের রুখতে হবে। মোকাবিলা করতে হবে। আগামী নির্বাচনে প্রমাণ করে দিতে হবে, এই দেশ বঙ্গবন্ধুর দেশ। এই দেশ মুক্তিযোদ্ধার দেশ। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, নির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী প্রমুখ।