ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত ৫নং সাঁড়া ঘাট এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। সাঁড়া ঘাটের পাশেই রয়েছে জেলে পল্লী। গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হওয়ায় জেলে পল্লীতে আতংক বিরাজ করছে। ভাঙনের ভয়ে পল্লীর অধিবাসীদের কারও চোখে ঘুম নেই। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার জন্য পদ্মায় অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনকে দায়ী করেছেন এলাকাবাসী।
ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম সাঁড়া নদী বন্দরের একসময়ে ব্যাপক এটি পরিচিত ছিল। পদ্মার ভয়াল ভাঙনে এখন আর নদী বন্দরের চিহ্নও নেই। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু হতে প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তরে এ সাঁড়া ঘাট ভাঙনের কবলে পড়ে এখন বিলীনের পথে।
ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের আরামবাড়িয়া হতে পাকশী ইউনিয়নের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পর্যন্ত নদী তীরের ৮ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৭ কিলোমিটার নদী রক্ষা বাঁধ রয়েছে। শুধুমাত্র সাঁড়া ৫নং ঘাট এলাকার প্রায় ১ কিলোমিটারে বাঁধ নেই। গতবছর সাঁড়া ঘাটের প্রায় ৫০ ফুট এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
মৎস্য সমিতির সরকারিভাবে নির্মিত ঘরটির একাংশ ভাঙতে ভাঙতে বুধবার রাতে নদীতে চলে গেছে। পুরো ঘরটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এর আশপাশের দোকানপাটগুলোও যে কোনো সময় নিশ্চিহ্ন হতে পারে। নদী থেকে বসতবাড়ির দূরত্ব এখন মাত্র ১৫ ফুট। ভাঙনে প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বাড়িঘর বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে।
ঘাটের মৎস্য সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জনান, ৫নং সাঁড়া ঘাটের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে সাত কিলোমিটার ব্যাপী নদী রক্ষা বাঁধ রয়েছে। বর্ষাকাল এলেই আমাদের ভাঙনের আতংক শুরু হয়। এবারে অবস্থা খুবই ভয়াবহ। সর্বগ্রাসী পদ্মা ভাঙতে ভাঙতে বসতবাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। এবারে বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যেতে পারে। খুবই উৎকণ্ঠায় দিন কটাচ্ছি।
ব্যবসায়ী মিলন জানান, এলাকার অধিকাংশ মানুষ অতি দরিদ্র। জেলে পল্লীসহ এলাকায় প্রায় তিন হাজার বাসিন্দা খুব আতংকের মধ্যে রয়েছে। বাপ-দাদার বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হলে পথে বসতে হবে। রাতে কারও চোখে ঘুম নেই। বাঁধ নির্মাণের জন্য এলাকার জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডেন কর্মকর্তাদের কাছে আমরা ধর্ণা দিয়েছি বারংবার। মানববন্ধনও করেছি, কিন্তু বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেই।
ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত ৫নং সাঁড়া ঘাট এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে।
জেলে পল্লীর মোড়ল অসিত হালদার বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা প্রায়ই ভাঙন দেখে যায়, কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে উদ্যোগ নেয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মাপামাপি করে চলে যায়। আমাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হওয়ার পর কী তারা বাঁধ নির্মাণ হবে ? কার কাছে আমাদের কষ্টের কথা বলবো। কে শুনবে আমাদের কথা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ রফিক বলেন, ৫নং ঘাট এলাকার মানুষজন খুবই আতংকে রয়েছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে এখানে ভাঙন শুরু হয়েছে। মাত্র দেড় কিলোমিটার অদূরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু। পূর্বে ৫০০ মিটার দূরে ঈশ্বরদী ইপিজেড। নদীর গতিপথ পরিবর্তনে এসব স্থাপনাও হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, তারা ব্যবস্থা না নিলে আমরা কি করবো।
সাঁড়া ইউপি’র চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার বলেন, ৫নং ঘাটের বসতবাড়ি, দোকানপাট চরম হুমকির মুখে। বাড়িঘর যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। শুধুমাত্র ৫নং ঘাট এলাকার এক কিলোমিটার বাঁধ নেই। পাউবো কর্তৃপক্ষ কেন বাঁধ নির্মাণ করছে না তা আমার বোধগম্য নয়। এবিষয়ে বারবার ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলীকে এ বিষয়টি অবহিত করেছি বলে জানান তিনি। পাউবোর কর্তৃপক্ষ বাঁধ নির্মাণের জন্য নদীর তীর পরিমাপ করেছে, এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখানকার প্রায় ৩ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা সংকটের মুখে।
ঈশ্বরদীর ইউএনও পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, নদীর মূল চ্যানেলের মুখে পলিমাটি জমে যাওয়ায় নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে ওই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। তাছাড়া স্রোতের তীব্রতাও প্রবল। এবিষয়ে সাত কিলোমিটার নদী ভেড়ামারাপ্রান্তসহ নদী শাসনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান বলেন, সাঁড়ার ৫নং ঘাট এলাকায় আমি নিজে গিয়েছিলাম। গতবছর নদী ভাঙন শুরু হলে সেখানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন রোধ করা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।