মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী : রাজশাহীতে আকাশছোঁয়া দামের কারণে সাধারণ মানুষে এখন আর ইলিশ কিনতে পারছেন না। ইলিশের দাম সব সময়ই ক্রেতাদের নাগালের বাইরেই থাকছে। পদ্মা-মেঘনায় যখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে তখনও যেই দাম, এখনও সেই একই দাম।
বাজারে ইলিশের যে দাম, তাতে ইলিশ কেনা তো দূরের কথা এখন দাম করতেও আর কাছে যাওয়া যায় না। ইলিশ এখন আর গরিবের নেই।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে এখন। সরবরাহ কম। তাই দাম বেশি।
তবে ক্রেতারা বলছেন, এখন আর মৌসুম লাগে না। সব সময়ই ইলিশের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরেই থাকে। পদ্মা-মেঘনায় যখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে তখনও যেই দাম, এখনও সেই দাম।
সোমবার (১৮ জুলাই) সাহেব বাজারে মাছ কিনতে আসা ক্রেতা চা দোকানী রহমান বলেন, কত দিন যে ইলিশ মাছ খাইনি! ইলিশের স্বাদও যেন মনে নেই। বাজারে ইলিশের যে দাম, তাতে আমাদের মতো মানুষের আর ইলিশ খাওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে।
তবে কেবল রহমানই নন সাহেববাজারে আসা নিম্নআয়ের মানুষগুলোর মুখেও ওই একই কথা। ফাইসাল নামের এক ক্রেতা বলেন, আগে রাজশাহীর পদ্মায় ইলিশ ধরা পড়তো। এছাড়া প্রতিদিন ভোরে সুদূর বরিশাল ও চাঁদপুর থেকে ট্রাকবোঝাই ইলিশ আসতো রাজশাহীর নিউমার্কেটের পাইকারী আড়তে। একেবারে গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষ সেখানে গিয়ে কম দামে ইলিশ কিনতে পারতেন। ছোট ও পেট ফাটা ইলিশগুলো আরও কম দামে ছেড়ে দিতেন মাছ বিক্রেতারা। সেই মাছ কিনে নিয়ে স্ত্রী-সন্তানের মুখে ইলিশের স্বাদ দেওয়া যেতো। কিন্তু আর সেই যুগও নেই। ছোট হোক আর ফাটা হোক একই দাম। তাই তার মতো মানুষ আর ইলিশ কিনতে পারেন না।
মিন্টু নামের আরেক ক্রেতা রাজশাহীতে সিন্ডিকেট করে ইলিশের দাম বাড়ানোর অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বরিশাল ও চাঁদপুর থেকে সরাসরি ট্রাকবোঝাই ইলিশ এসে নামে নিউমার্কেট এলাকায়। সেখান থেকে সাহেববাজার, শালবাগান ও নওদাপাড়াসহ বিভিন্ন বড় বড় বাজারে চলে যায় ইলিশ। ক্রেতারা একটু কম দামে ইলিশ পাওয়ার জন্য আগে ভোরে নিউমার্কেটে থাকা ইলিশের পাইকারী আড়তে আসেন। কিন্তু এখন পাইকারী আড়তেও ইলিশের দাম বেশি। আর পাইকারী বাজারে যে দাম খুচরা বাজারেও সেই একই দাম। এটা বোঝা যায়, সিন্ডিকেট করে ইলিশের দাম বাড়ানো হয়েছে। রাজশাহীর যে বাজারেই যান না কেন, ওজন ভেদে ইলিশের দাম একই রকম।
এদিকে সোমবার সকাল থেকে রাজশাহীর নিউমার্কেট ও সাহেববাজার ও শালবাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে যথেষ্ট ইলিশের আমদানী রয়েছে। কিন্তু ক্রেতা কম। দামের কারণে ইলিশের দরদাম করেই বাড়ি ফিরছেন নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষ। আর দিনমজুরি খেটেখাওয়া মানুষগুলো ইলিশের ধারে কাছেই যান না। তাদের কাছে ইলিশ কেনা এখন স্বপ্নের মতো ব্যপার। দামের আগুনেই যেন পুড়ছে গরিবের ইলিশের স্বাদ। মনে চায় কিন্তু কেনার উপায় নেই। বাজারে এখন বিভিন্ন আকারের ইলিশের দাম আগেরও চেয়েও চড়া। সাড়ে ৬শ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কেনা গেলেও এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে এক হাজার ৮শ টাকা দিতে হচ্ছে।
সোমবার সকালে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার ও নিউমার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ৪ থেকে সাড়ে ৪শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি, ৫শ গ্রাম থেকে ৬শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়, ৭শ গ্রাম থেকে ৮শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। আর এর ওপরে থাকা বড় সাইজের স্বাদু ইলিশগুলো বাজারে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বড় ইলিশ কিনতে একদিন আগেই অর্ডার দিয়ে আসতে হচ্ছে। তাই আগের মতো আর ইলিশের বিক্রি নেই। অনেক মানুষই বাজারে এসে কেবল ইলিশের দর-দাম করছেন।
এখন আর ইলিশের ভরা মৌসুম আর নিষিদ্ধ মৌসুম বলে কথা নেই। সব সময়ই একই অবস্থা বিরাজ করছে রাজশাহী বাজারে।
নিউমার্কেট এলাকার পাইকারী ব্যবসায়ী জুম্মন আলী বলেন, এখন আর খুচরা ও পাইকারী বাজারে দামের তেমন কোনো তারতম্য নেই। দাম প্রায় একই। তবে যারা সরাসরি পাইকারি বাজার থেকে ইলিশ কিনছেন তারা ছোট ও বড় সাইজের মাছ মিলিয়ে নিতে পারেন। এতে বেশি মাছ নিলে ছোট মাছের সঙ্গে কয়েকটা বড় মাছও পান। এই সুযোগটা খুচরা বাজারে নেই। কারণ এখান থেকে মাছ নিয়ে তারা বড় মাছগুলো সাইজ অনুযায়ী বাছাই করে ফেলেন এবং সেগুলো বিভিন্ন দামে বিক্রি করেন। এর কারণ হচ্ছে ওজন হিসেবেই খুচরা বাজারে ইলিশের দাম নির্ধারণ হয়।
আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আছে। এরপর বাজারে আবারও ইলিশের সরবরাহ বাড়বে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও চাঁদপুর থেকে প্রতিদিনই ৩/৪ ট্রাক করে ইলিশ আসবে। এখন মোকামে নিলামের পর কয়েক হাত ঘুরে তার পরই কিছু মাছ আসছে। ফলে ওজন ভেদে কেজি প্রতি ইলিশ ৫০ থেকে ১০০ টাকা দাম এমনিতেই বেড়ে যাচ্ছে।
এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। সরবরাহ কম তাই দাম বেশি। সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে বলেও দাবি করেন এই ইলিশ ব্যবসায়ী।