নিজ অফিসের কাজকর্ম ফেলে নির্বাচন অফিসের ভোটার তালিকার হালনাগাদ ও পরিসংখ্যান অফিসের জনশুমারী ও গৃহগননার দায়িত্ব পালনসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঈশ্বরদী উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) সকালে উপজেলার একাডেমিক সুপারভাইজারের অফিসে গেলে দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। এসময় পাশে অফিসের কর্মচারীরা জানান, গত এক সপ্তাহ যাবৎ তিনি নির্বাচন অফিসের ভোটার তালিকার হালনাগাদ ও পরিসংখ্যা অফিসের জনশুমারী ও গৃহগননার কাজ করছেন।
তার এমন কর্মকান্ডে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানগন।
মাধ্যমিক স্তরে শ্রেণি কক্ষ পরিচালনা, প্রত্যাহিক সমাবেশ ও শুদ্ধভাবে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া, শিক্ষকদের নিয়মিত পাঠটীকা প্রস্তুত এবং সে অনুযায়ী ক্লাস নেয়া, শিক্ষকদের নিয়মিত ডায়েরী অনুসরণ করা সহ শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারি পরিপত্র অনুযায়ি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানো হচ্ছে কি না সেগুলো দেখভাল করার জন্য ২০১৪ সাল থেকে সরকার প্রতিটি উপজেলায় একজন করে একাডেমিক সুপারভাইজার নিয়োগ দেন।
সেই ধারাবাহিকতায় ৪৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১৮ টি মাদ্রাসা দেখভাল করার জন্য ঐ বছরই ঈশ্বরদী উপজেলায় একাডেমিক সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ পান আরিফুল ইসলাম।
তবে নিয়োগের পর থেকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তার সাথে সখ্যতা গড়ে দায়িত্বে পালনে অবহেলা করে আসছেন বলে পাহাড় সমান অভিযোগ রয়েছে আরিফুল ইসলামে বিরুদ্ধে।
কাজের গতি সচল রাখার জন্য সরকারী ভাবে প্রত্যেক সুপারভাইজারকে একটি মোটরসাইকেল সহ জ্বালানী খরচ দেওয়া হয় । অথচ আরিফুল ইসলাম নিয়মিতভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তদারকি না করে নিজের খেয়াল খুশি মতো কাজ করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ একাধিক কর্মকর্তা -কর্মচারী ও শিক্ষকদের।
তার এমন দায়িত্ব অবহেলার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সরকার কর্তৃক যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয় সঠিক তদারকির অভাবে সেগুলো দীর্ঘসময় কাগজে-কলমেই ফাইল বন্দি হয়ে পড়ে থাকে।
সাম্প্রতিক সারাদেশে ভোটার তালিকার হালনাগাদ ও পরিসংখ্যা অফিসের জনশুমারী ও গৃহগননার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জানা গেছে, অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা ভোগের আশায় ২০২২ সালের অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার সকল দায়িত্ব বাদ দিয়ে নিজ অফিসের কাজকর্ম ফেলে মুল ফটকে তালা ঝুলিয়ে নির্বাচন অফিসের সুপারভাইজার হিসেবে লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে ভোটার তালিকার হালনাগাদ ও পরিসংখ্যা অফিসের জনশুমারী ও গৃহগননার দায়িত্ব পালন করছেন আরিফুল ইসলাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, মাসের অধিকাংশ সময়ই তো তাকে উপজেলার নানা অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় তাহলে অফিসের দায়িত্ব পালন করবেন কখন। এসব কাজ করতে গিয়ে যে তার মূল কাজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তদারকি মারাত্নকভাবে ব্যহত হচ্ছে সেদিকে কোনো খেয়াল থাকে না।
একজন একাডেমিক সুপারভাইজারের কাজ হচ্ছে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকার কর্তৃক নির্দেশিত “পারফরমারেন্স বেইজড ম্যানেজমেন্ট” শক্তিশালী করা। অথচ কোন নিয়মই অনুসরণ করছেন না ঈশ্বরদীতে কর্মরত একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম।
বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে জানা গেছে, গত মাস তো দুরের কথা করোনা পরবর্তী সময়ে একদিনও বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান নি একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম।
জানাগেছে, বছরে দু’এক বার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শনে গিয়ে বিভিন্ন খাতাপত্রে স্বাক্ষর করে সারা বছরের সক্রিয়তা ঠিক রাখেন তিনি।
তার এমন দায়িত্ব অবহেলার কারনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা যথাযথভাবে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ডায়েরী অনুসরণ করছেন না। নানাবিধ অসুবিধা ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যতা থাকার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা তার এমন কাজের প্রতিবাদ করতে সাহসও পায় না।
উপজেলার একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান, ইতি পূর্বে একই ভাবে উপজেলা পরিসংখান অফিসের আদমশুমারি গননার কাজেও সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আরিফুল ইসলাম। তখনও এভাবে অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিনভর গননার কাজ করতে তিনি।
এ বিষয়ে জানতে, উপজেলা নির্বাচন অফিসার আশরাফুল হকের মুঠো ফোন তিন দিন ধরে ফোন দিয়েও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম বলেন , আমাকে সরকার থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমি সেটাই পালন করছি। শিক্ষা অফিস থেকে কোনো চিঠি বা অনুমতিপত্র আছে কি না প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে শিক্ষা মন্ত্রানালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এটা আমার বস সেলিম আক্তার অবগত।
তবে এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আকতার জানান, শিক্ষা মন্ত্রানালয় থেকে বা আমাদের অফিস থেকে আমরা এ বিষয়ে কোনো অনুমতি পত্র দিতে পারি না। এ বিষয়ে তাকে কোনো অনুমতিপত্র দেওয়া হয় নি। অন্য অফিসের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করা এবং সংশ্লিষ্ট সকল কাজের কোনো ব্যাঘাত ঘটছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে সেলিম আকতার জানান, কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এরকম অভিযোগ দেয় তাহলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এদিকে ঈশ্বরদী উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা যায়, আবেদনের প্রেক্ষিতে একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলামকে জনশুমারি ও গৃহগণনা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে যেকেউই আবেদন করতে পারেন। আবেদনকারীদের মধ্যে বাছাই করে দায়িত্বরত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। এখানে মন্ত্রণালয় থেকে পূর্ব নির্ধারিত কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। কেউ আবেদন করে থাকলে এ দায় তার নিজস্ব।
এদিকে পাবনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম মোসলেম উদ্দিন এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিজ অফিসের কার্যক্রম ফেলে অন্য অফিসের দায়িত্ব পালন করা মোটেও যুক্তিগত নয়। নিজ অফিসের কোনো দায়িত্ব অবহেলা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।