ইউক্রেনে আগ্রাসনের জবাবে রাশিয়ার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই দেশের রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ভারী সরঞ্জাম পাঠালো মস্কো। প্রথমবারের মতো দেশে সরঞ্জাম পাঠিয়েছে তারা। ভারী এসব সরঞ্জাম আকাশপথে নিয়ে আসা হয়েছে।
রোববার দুপুরে ৮৪ টন কার্গো অফলোড করার জন্য একটি বিশেষ কার্গো ফ্লাইট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ‘এম্বেডেড কম্পোনেন্টস অব ফাস্টেনার অফ প্যাসিভ কোর ফ্লাডিং সিস্টেম হাইড্রো-অ্যাকুমুলেটর’ উল্লেখ করা ছিল কার্গোর ট্যাগে।
রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ঢাকা বিমানবন্দরের সূত্র জানায়, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা এবং সামুদ্রিক বিধিনিষেধের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় প্রকল্পের সাইটে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাঠানোর জন্য বিমানপথ বেছে নিয়েছে রাশিয়া।
যন্ত্রগুলো সড়কপথে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এর আগে, সমুদ্রপথে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পাঠাতো রাশিয়ার স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি কর্পোরেশন রোসাটম।
রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্টের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পের দুটি ইউনিটের ভারী যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্টিম জেনারেটর এবং রিয়্যাক্টর প্রেশার ভেসেল।
পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়া সমুদ্রপথে পণ্যের চালান থেকে বিরত থাকলেও আকাশপথে সরবরাহ চালু রাখবে বলে জানা গেছে।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করা হচ্ছে রূপপুরে। খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
আর রাশিয়া থেকে ঋণসহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের এপ্রিলে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায় রূপপুর কর্তৃপক্ষ। আর ২০২৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে আশা করা হচ্ছে।
রূপপুর প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে, রাশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। এগুলো নির্ধারিত সময় ধরে এগোচ্ছে। সময়মতো যন্ত্রপাতি প্রকল্প এলাকায় পৌঁছানো হচ্ছে। দেশেও প্রতিটি কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। কোনো কোনো কাজের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমার চেয়ে এগিয়ে আছে রূপপুর। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের কাজে আর্থিক ও ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৪৬ শতাংশ।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে রূপপুরে ইউনিট-১-এর ভৌত কাঠামোর ভেতরে চুল্লিপাত্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই ইউনিটের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে বলা যায়। এটি স্থাপনে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থার (আইইএ) মান অনুসরণ করতে হয়েছে। চুল্লিপাত্র হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এই যন্ত্রের মধ্যেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম লোড করা হয়।