সোমবার , ২৮ মার্চ ২০২২ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. নির্বাচন
  14. পাবনা
  15. ফিচার

আজ মাধপুর দিবস : সেদিন পাকহানাদার বাহিনীরা কেউ জীবিত ফেরত যায়নি!

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
মার্চ ২৮, ২০২২ ১০:১৬ অপরাহ্ণ
আজ মাধপুর দিবস : সেদিন পাকহানাদার বাহিনীরা কেউ জীবিত ফেরত যায়নি!

১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ ঐতিহাসিক ‘মাধপুর দিবস’। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিকামী জনতার আক্রমণে সম্মুখ প্রতিরোধ যুদ্ধে ঈশ্বরদীর মাধপুর থেকে পাকহানাদার বাহিনীর কেউই জীবিত ফেরত যায়নি।

ওইদিনে ঈশ্বরদী উপজেলার শেষ সীমানা পাবনা সদর উপজেলার মাধপুরে গ্রামে হানাদার বাহিনীদের সঙ্গে প্রথম প্রতিরোধের সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ৫০ জন নিরীহ গ্রামবাসী।

পাবনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর নেতৃত্বে মাধপুরে সেদিন প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়েছিল।

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে প্রতি বছরের ২৯ মার্চ পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আয়োজনে, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ- যুদ্ধাহত বীর-মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সন্তান-পরিজনকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও মিলনমেলায় অংশ নিয়ে স্মৃতি আবেগময় অনুভূতি ব্যক্ত করতেন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর পাবনার মুক্তিকামী জনতারা প্রস্তুত ছিল, যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য।

পাবনার স্বাধীনতাবিরোধী কুখ্যাত রাজকারদের মাধ্যমে এই বার্তাটি পৌঁছে যায় দ্রুত। তাই পাকিস্তানি হানাদাররা ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চে বিভীষিকাময় কালো রাতে অপারেশন সার্চলাইটের নামে নেতৃত্ব শূন্য করার নামে যে গণহত্যার তিনটি জেলা বেছে নেয় এরমধ্যে চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়ার পরেই ছিল পাবনা।
মাধপুরে পাক-হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেওয়া তৎকালীন পাবনা অ্যাডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের এজিএস, বর্তমানে উত্তরবঙ্গের প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা, বীর-মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রশীদুল্লাহ বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে রাজশাহী থেকে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের এক কোম্পানি পদাতিক সৈন্য পাবনায় আসেন। তারা অবস্থান নেন, বিসিক এলাকায়। এ কোম্পানির কমান্ডিং অফিসার ছিলেন ক্যাপ্টেন আসগার এবং ডেপুটি কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট রশীদ। এদের সঙ্গে ছিলেন তিনজন সুবেদার এবং নায়েক সুবেদারসহ ১৩০ জন সৈন্য। সেদিন পাবনাতে কোনো বাঙালি আর্মি বা ইপিআর ছিল না বলে পাকসেনারা সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ চালিয়ে বলতে থাকে ‘কারফিউ হো গিয়া হ্যায়, সব শালা ভাগ যাও’।

তিনি বলেন, সেদিন সাধারণ মানুষ বুঝে ওঠার আগেই বেলা ১১টার দিকে আতর্কিতভাবে গুলি চালিয়ে বহু মানুষ হত্যা করে। ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে ২৭ মার্চ রাত পর্যন্ত পাবনায় বুদ্ধিজীবীদের আটকে সারারাত অমানুষিকভাবে নির্যাতন চালানো হয়। ২৭ মার্চ বিপুল অস্ত্র নিয়ে পাবনা পুলিশ লাইনের দিকে আসতে শুরু করে পাকসেনারা। তাদের টার্গেট ছিল, পুলিশের অস্ত্র লুট করে নিরস্ত্র করা। পাবনার প্রশাসন আগেই উপলব্ধি করতে পারে। তাই ২৮ মার্চ তৎকালীন জেলা প্রশাসক নুরুল কাদের খানের সঙ্গে তৎকালীন পাবনার সকল ছাত্রনেতারা গোপনে বৈঠক করে। পাবনা জেল থেকে সকলকে মুক্ত করে দিয়ে অস্ত্রাগার এবং আদালতের মালখানা থেকে অস্ত্র বিলি করা হয় তৎকালীন ছাত্র নেতাদের মধ্যে। সেই অস্ত্র দিয়ে পুলিশ লাইনে পাকবাহিনীর সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে যুদ্ধ। সেদিন প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে পাকসেনাদের, তারা কল্পনা করেনি। বাধ্য হয়ে পিছু হটতে শুরু করে। মুক্তিকামীদের বিজয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ে গোটা পাবনা জেলাতে। ২৮ মার্চ মাথায় কোমরে গামছা বেঁধে হাজারো জনতা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে লাঠি, ফলা, বন্দুক নিয়ে পাবনা বিসিক এলাকা পাকিস্তানিদের ঘিরে ফেলে। পাবনা টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ভেতরে তুমুল যুদ্ধ হয়। সেদিন পাবনা শহর থেকে কোনো পাকিস্তানি আর্মিরা বের হতে পারেনি।

মোহাম্মদ রশীদুল্লাহ বলেন, ২৯ মার্চ সকাল ১০টার দিকে পাবনার আকাশে হঠাৎ বিমান উড়তে দেখা যায়। বিমান থেকে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে দেখা গিয়েছিল। পাবনার হেমায়েতপুর অতিক্রম করে দাপুনিয়া ইউনিয়নের গ্রামের কাঁচা রাস্তার ভেতর দিয়ে রাজশাহীর দিকে পালানোর আগে পাকিস্তানি আর্মিরা সাদা পতাকা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ১১টি ট্রাক থামায়। প্রকৃত পক্ষেই সেদিন মুক্তিকামী জনতাকে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এয়ারকভার দিয়ে অবরুদ্ধ পাকিস্তানি সেনাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পাকিস্তানি আর্মিরা। অবরুদ্ধ পাকসেনারা দ্রুতই ওই ট্রাকে উঠে পড়ে। কিন্তু এর আগে পাবনা শহর থেকে আটক বাঙালিদের লাইন ধরে ধরে দাঁড় করিয়ে পাবনা মহকুমা আওয়ামী লীগ সভাপতি, পাবনা পৌরসভা ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুদ্দিন এমপিএ, ভাসানী ন্যাপ নেতা ও দন্ত চিকিৎসক অমলেন্দু দাক্ষী, মোটর মালিক-হোটেল ব্যবসায়ী সাঈদ তালুকদারসহ অনেককে গুলি করে হত্যা করে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালোর ২৯ মার্চ, ১১টি ট্রাকে অস্ত্র সজ্জিত করে গ্রামের কাঁচা রাস্তা দিয়ে রাজশাহীর দিকে পালিয়ে যাওয়ার সময় মাধপুর পৌঁছালে সেদিন কোনো কমান্ড ছাড়াই ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রাজু, ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ওহিদুর দেশ প্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মোকাবিলা করতে গিয়েছিল পাক আর্মিদের সঙ্গে। এসময় পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া মাধপুর বটতলা গাছের গোড়ায় লুকিয়ে থাকা রাজুকে লক্ষ করে গুলি ছোঁড়ে। প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় ছাত্রনেতা রাজু গাছের গোড়ায় আশ্রয় নিলে সেদিন বন্দুকের নালা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল পাকসেনারা। প্রতিরোধের মুখে সাঁহাপুরের ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ওহিদ শহীদ হন।

তৎকালীন পাকশী শহর ছাত্রলীগের সভাপতি, বর্তমানে পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম হবিবুল অনুভূতি জানিয়ে বলেন, সেদিন বৃষ্টির মতো গুলি করতে থাকে পাকিস্তান আর্মিরা মুক্তিকামী জনতার ওপর। মাধপুর বটতলাসহ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খবর পেয়ে আমরা (মুক্তিযোদ্ধারা) ঈশ্বরদী, পাকশী রূপপুর অঞ্চলের আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে অসংখ্য যুবক বন্দুক হাতবোমা ছাড়াও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর নেতৃত্বে সেদিনকে আমরা পাকিস্তানি আর্মিদের সঙ্গে প্রথম প্রতিরোধ সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। এসময় বোমার আঘাতে পাকসেনাদের জিপে আগুনও ধরে যায়, বহুপাকসেনা নিহত হয়।

তৎকালিক পাকশী হাইস্কুল ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুল ইসলাম আরও বলেন, মুক্তিকামী জনতার প্রতিরোধ না ঠেকাতে পেরে সেদিন পাকসেনারা নিহতদের মরদেহগুলো ট্রাকে তুলে মাধপুরে আশেপাশের বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালাতে শুরু করে। তাদের প্রতিরোধ করতে রাজ্জাক, গফুর, নবাবসহ অনেকেই শহীদ হন। ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়াতে পৌঁছালে অনুরূপভাবে মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। একইভাবে মুলাডুলি পৌঁছালে তাদের প্রাণহানি ঘটে মুক্তিকামী বীর জনতার হাতে। সেদিন প্রাণ নিয়ে অক্ষতভাবে কোনো পাকসেনারা আর ফিরে যেতে পারেননি।

সেদিন মাধপুর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন। তাদের স্বাধীনতার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা ও স্মরণসভা হয়। মাধপুরের স্মৃতি ধরতে রাখতে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় বটতলার ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রেখেছেন। মহান স্বাধীনতার পর ২০২১ সালে করোনাকালীন সময়ে স্মৃতিচারণমুলক কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। এ বছরও পাবনার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি।

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

দুঃখিত,এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি করা নিষিদ্ধ