মোস্তফা আলীর বয়স ৬০ পেরিয়েছে। ৪২ বছর আগে একটি দুর্ঘটনায় তার জীবনে বড় একটা বাঁক এনে দেয়। ওই দুর্ঘটনায় একটি পা হারানোর পর তার সঙ্গী হয়েছে ক্র্যাচের আদলে তৈরি লাঠি।
নাটোরের লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃঞ্জপুর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা দুর্ঘটনায় পা হারালেও থেমে থাকেনি জীবন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর স্ত্রীর সহযোগিতায় মোস্তফা আলী এখন একটি উদাহরণ।
এক পা নিয়েই দিব্যি খেজুর গাছে উঠে যাচ্ছেন তিনি, রস সংগ্রহ করছেন। চলছে চাষাবাদ, করেছেন মাটি কাটার কাজও। এমনকি দিনমজুরের কাজেও বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে মোস্তফার।
মোস্তফা আলী বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় পা হারানোর পর সংসার চালাতে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন চাষবাস। করেছেন পুকুর খননের কাজও। সব কাজই করেন এক পায়ে। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে শীত মৌসুমে বেছে নেন গুড় তৈরির পেশা। গাছে ওঠা থেকে শুরু করে মাথায় করে বাজারেও গুড় নিয়ে যান তিনি।
মোস্তফা আলী এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। ছেলে-মেয়ে দু’জনেরই বিয়ে হয়েছে, নিজেদের মতো সংসার করছেন তারা। শীতকালে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করেন এবং বছরের অন্য সময়ে অন্যের জমিতে বর্গাচাষ, পুকুর খননসহ দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতে হয় তাকে। এক সময় মাঠে ছিল ফসলের জমি কিন্তু পায়ের চিকিৎসার খরচে সব জমি বিক্রি করতে হয়েছে। বর্তমানে বাড়ি ভিটা ছাড়া কিছুই নেই।
মোস্তফার যখন ২৪ বছর বয়স। শ্রমিক হিসেবে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা থেকে ধান কাটতে যেতেন তিনি। ধান কেটে একদিন ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন মোস্তফা। আজিমপুর রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে নামার সময় হঠাৎ ট্রেন ছেড়ে দিলে ডান পাঁ পিঁছলে চাকার নিচে চলে যায়। পরে পুরো পা কেটে ফেলতে হয়। পা হারানোর দেড় বছর পর পাশের গ্রামের রেখা নামে এক তরুণীর সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তবে বিয়ের আগে তার স্ত্রী রেখা জানতেন না স্বামীর এক পা নেই। বিয়ের পর জানতে পারেন স্বামীর একটি পা নেই। ভাগ্যের পরিহাস মেনে নিয়েই কেটে গেছে দীর্ঘ ৪৪ বছর।
তার স্ত্রী রেখা বলেন, আমি না দেখে তাকে বিয়ে করি। পরে জানতে পারি তার এক পা নেই। ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। কপালে ছিল তাই হয়েছে। অনেক সুখে আছি পরিবার নিয়ে। তবে বয়সের ভারে আগের মতো কাজ করতে পারেন না স্বামী। দুজনেই অসুস্থ। হাত পাততেও পারেন না কারও কাছে। চিকিৎসা খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
মোস্তফা আলী বলেন, আগে যুবক ছিলাম। শরীরে শক্তি ছিল, এখন বয়স হয়েছে। আগের মতো তেমন কাজ করতে পারি না। এক পা না থাকায় শক্তি অনেক কমে গেছে। সরকারের কাছে আমার চাওয়া, শেষ সময় যদি আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগীতা করতো, বাকি জীবনটা পরিবার নিয়ে কাটাতে পারতাম।