শুক্রবার , ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. নির্বাচন
  14. পাবনা
  15. ফিচার

ঈশ্বরদীর আদিবাসী : ওরা হারিয়ে ফেলেছে মায়ের ভাষা

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২ ১:৫৭ অপরাহ্ণ
ঈশ্বরদীর আদিবাসী : ওরা হারিয়ে ফেলেছে মায়ের ভাষা

ঈশ্বরদীর মেঠোপথ পেরিয়ে স্কুলে যাচ্ছে মাড়মী আদিবাসী পল্লির শিশুরা


ঘরে-বাইরে সবখানেই খট্টা বা মুন্ডারি ভাষায় কথা বলতেন তারা একসময়। কথা বলতেন সাদরী ভাষায়। এমনকি এই দশক দু-এক আগে প্রকাশ্যে বাংলা ভাষা ব্যবহার করলেও নিজেদের মধ্যে ঘরে বা পাড়ায় ব্যবহার করতেন মাতৃভাষাই। অথচ এখন কি ঘরে, কি বাইরে সে ভাষায় আর তেমন একটা কথাবার্তা বলা হয় না তাদের। মর্মান্তিক ব্যাপার হলো, ঈশ্বরদীতে সাম্প্রতিককালে বেড়ে ওঠা এই আদিবাসীদের তরুণ প্রজন্ম জানেই না, তাদের আলাদা নিজস্ব মাতৃভাষা ছিল!

ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মাড়মি আদিবাসী পল্লির পাহাড়িয়া এবং মুলাডুলি ইউনিয়নের আটঘরিয়া পুকুরপাড়া গ্রামের মুন্ডারি আদিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এসব কথা। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিপন্নপ্রায় আদিবাসী ভাষাগুলোর সংরক্ষণ, প্রসার ও উন্নয়ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘ থেকে ২০২২-২০৩২ সময়কালকে ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা দশক’ পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অথচ এ সম্পর্কেও কোনো কিছু জানেন না ঈশ্বরদীর এসব পল্লির কোনো আদিবাসী।
আটঘরিয়া পুকুরপাড়া গ্রামের প্রবীণ আদিবাসী নিতাই মুন্ডারি বলছিলেন, বাংলাভাষীদের সঙ্গে থাকতে থাকতে এখন এ ভাষাতেই কথা বলেন তারা। তবে ঘরে বা নিজেদের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ‘সাদরী’ ভাষাটাই বেরিয়ে আসে মুখ দিয়ে।

একই পল্লির বাসিন্দা শ্রীকান্ত মুন্ডারি বলেন, এই আদিবাসীপাড়ায় ১৮টি পরিবারে মোট ৮০-৯০ জন বাস করি আমরা। ছোটবেলায় ‘খট্টা’ ভাষায় দু-একটি কথা বলতে শুনেছি। তবে এখন সেসব আমরাও ভুলে গেছি। প্রৌঢ় মদন চৌকিদারও বললেন, এখন আর আমাদের নিজেদের মধ্যেও মুন্ডারি বা খট্টা ভাষায় কথা বলার তেমন চল নেই।
মাড়মী পল্লিতে বাস করেন ৩০০-৪০০ পাহাড়িয়া আদিবাসী। তাদের একজন প্রৌঢ় পৌল বিশ্বাস জানালেন, তাদের নিজেদের ভাষা ছিল ‘মালতো’। কিন্তু সে ভাষার চর্চা এখন আর নেই।

মাড়মী পল্লির আদিবাসীদের স্মৃতিতে এখনও অম্লান তাদের পুরোনো সর্দার ডমিনিক বিশ্বাস মাস্টার। তার কথা স্মরণ করতে করতে ৮২ বছর বয়সী বৃদ্ধ ক্লেমেন্ট বিশ্বাস বললেন, ডমিনিক যখন বেঁচে ছিলেন, তখনও কোনো কোনো সময় আমরা মালতো ভাষায় কথা বলতাম। তবে এখন তো নিজেদের ভাষায় কথা বলার সুযোগও কমে এসেছে। জঙ্গল নেই, শিকার নেই, একসঙ্গে থাকার বা নিজেদের মধ্যে সব সময় কথা বলার সুযোগও তেমন নেই। তাই মালতো ভাষাও উঠে যাচ্ছে।

এসব বিষয়ে ঈশ্বরদীর শিক্ষাবিদ অধ্যাপক উদয় নাথ লাহিড়ী বলেন, মুন্ডারি ও পাহাড়িয়া এবং মাল পাহাড়িয়াদের আলাদা ভাষা ছিল। ওরা নিজেদের ভাষায় কথা বলত। ছোটবেলায় আমরাও ওদের ভাষা খানিকটা রপ্ত করার চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু এখন আর ওদের নিজেদের ভাষায় কথা বলতে শুনি না।

ইতিহাস ও ভাষা নিয়ে গবেষণাকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আর্য সম্প্রদায় এ জনপদে আসতে শুরু করার পর তাদের কারণে মুন্ডারি ও মালতো ভাষার বা মুন্ডারি কিংবা পাহাড়িয়াদের মূল আদিবাসী ভাষার হারিয়ে যাওয়ার শুরু। এখন এসব এলাকায় সেসব ভাষার প্রচলন আর নেই।

ঈশ্বরদী শহর থেকে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মাড়মী গ্রামে ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত সেন্ট ফিলিপস শিশু শিক্ষাকেন্দ্রটি অর্থাভাবে গত তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। সরেজমিন জানা যায়, স্কুলটিতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করত। শিক্ষাকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাড়মী আদিবাসী পল্লির শিক্ষার্থীরা পড়েছে সংকটে। কেউ কেউ বেশ কয়েক মাইল দূরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাম লেখালেও ছেলেমেয়ে বেশিরভাগই বাবা-মায়ের সঙ্গে কৃষিকাজ শুরু করেছে। হেঁটে যাতায়াত করতে গিয়ে নানা সমস্যাও হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে তাদের স্কুলে যাতায়াত এক প্রকার বন্ধই হয়ে যায়। এর ফলে নিজেদের ভাষা চর্চা দূরে থাক, বাংলাতে পড়ালেখা তাদের জন্য অনিশ্চিত। করোনাজনিত পরিস্থিতিতে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

(সূত্র : সমকাল। অসাধারণ এই প্রতিবেদনটি লেখেছেন ঈশ্বরদীর সিনিয়র সাংবাদিক সেলিম সরদার।)

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

দুঃখিত,এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি করা নিষিদ্ধ