ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য ও আলোচিত রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী মারা গেছেন। সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আলোচিত এই রাজনীতিকের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে রয়েছেন নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি ফেনীতে ‘হাজারী রাজত্ব’ কায়েম করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বর্ণাঢ্য রাজনীতির অধিকারী জয়নাল হাজারী পঁচাত্তর-পরবর্তী রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করা, বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে স্থানীয় পর্যায়ে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে তার নাম অন্যতম। তিনি ফেনীর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।
রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী
আলোচিত জয়নাল আবেদীন হাজারী ছিলেন একজন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৭১ সালে ২ নং সেক্টরের অধীনে ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের পরামর্শে রাজনগর এলাকায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর রাজনগরে গিয়ে ওই এলাকার বেকার যুবকদের নিয়ে তিনি একটি সিভিল ডিফেন্স টিমও গঠন করেছিলেন।
ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির হাতেখড়ি
ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি শুরু করেন বর্ণাঢ্য এই রাজনীতিক। ছাত্রাবস্থায় ফেনী কলেজে তৎকালীন ছাত্র মজলিশের (বর্তমান ছাত্র সংসদ) জিএস ছিলেন। এরপর বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। পরে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদেও দায়িত্বপালন করেন জয়নাল হাজারী।
টানা ২০ বছর ছিলেন জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক
ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ার অধিবাসী জয়নাল হাজারী ১৯৮৪ সালে প্রথম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ২০ বছর দায়িত্বপালন করেন। এর মধ্যে ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হন। এসময়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদেও দায়িত্বপালন করেন তিনি। মূলত ১৯৯৬ সালের পর তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় ফেনীতে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রায় ১২০ জন নেতাকর্মী মারা যায়।
বিদেশে আত্মগোপন, দল থেকে বহিষ্কার
২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১৬ আগস্ট রাতে তার বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। তখন তিনি পালিয়ে আত্মগোপনে ভারতে চলে যান। ২০০৪ সালে হাজারীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে তিনি ভারত থেকে দেশে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। একে একে তার বিরুদ্ধে করা সব মামলা থেকে অব্যাহতি পান। ২০১০ সাল থেকে ঢাকায়ই থাকেন তিনি।
বহিষ্কার হওয়ার দেড় দশক পর ফিরে পান আ’লীগের পদ
যৌথবাহিনীর অভিযানের মুখে দেশ ছাড়ার পর বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক আওয়ামী লীগের পদ হারান। ২০০৯ সালে দেশে ফেরার পর আর হারানো পদ ফিরে পাননি। স্থানীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হওয়ার পর রাজধানীতে অবস্থান করেন। সেখানে তিনি ‘হাজারিকা প্রতিদিন’ নামে পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পান তিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাকে এ পদে মনোনয়ন দেন।
১৯৪৫ সালের ২৪ আগস্ট ফেনী শহরের সহদেবপুরের হাবিবুল্লাহ পণ্ডিতের বাড়িতে আব্দুল গণি হাজারী ও রিজিয়া বেগমের সংসারে জন্ম নেন জয়নাল হাজারী। হাবিবুল্লাহ পণ্ডিত ছিলেন তার নানা।