পাবনার বেড়া পৌরসভা নির্বাচনের প্রচারণার শেষ মুহুর্তে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পাবনা-১ আসনের সাংসদ শামসুল হক টুকু পরিবারের বিরোধ সংঘাতে রূপ নিয়েছে। পুলিশী নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝেই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাংসদ টুকুর ছোট ভাই আব্দুল বাতেনের উপর হামলা ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় স্বতন্ত্রপ্রার্থী বাতেনসহ কমপক্ষে ১০ আহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বেড়া সিএন্ডবি বাজার এলাকার সাংসদপুত্র ও নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আসিফ শামস রঞ্জনের সমর্থকরা এই হামলা চালিয়েছে। ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজও আব্দুল বাতেন গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন।
বেড়া পৌরসভায় সাংসদ টুকু পরিবারে বিরোধ
প্রার্থী আব্দুল বাতেনের পাঠানো ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাদা শার্ট পরিহিত রমজান ও ময়ছারের নেতৃত্বে নৌকার পক্ষের ৩০/৩৫ জনের একটি দল অকথ্য গালিগালাজ করে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আব্দুল বাতেনকে এলাকা ছাড়তে হুমকি দিচ্ছেন। এ সময় আব্দুল বাতেনের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ সদস্যরা তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছেন। আর পুলিশের এই চেষ্টাকে উপেক্ষা করে নৌকার সমর্থকরা তাঁকে মারপিট করার চেষ্টা করছেন। প্রাণ বাঁচাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল বাতেন ও তাঁর সমর্থকরা বাজারের প্রবীর দত্তের মুদী দোকানে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখানেও হামলাকারীরা উপস্থিত হয়ে “একটা একটা বাতেন ধর, ধরে ধরে জবাই কর” শ্লোগান দিয়ে দোকানে আশ্রয় নেওয়াদের মারপিটের চেষ্টা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাচা ভাতিজার সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনায় বাজারের ব্যবসায়ী ও জনসাধারণের মাঝে তীব্র আতংক ছড়িয়ে পড়ে। মূহুর্তেই প্রাণভয়ে দোকান মালিকরা দোকান বন্ধ করে দ্বিগবিদ্বিগ ছুটাছুটি শুরু করেন। এ সময় হামলাকারী রঞ্জন সমর্থকরা বাতেনসহ প্রায় ১০জনকে আহত করে। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য জানান, ফজরের নামাজের পর থেকে পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচারণায় আমরা আব্দুল বাতেনকে নিরাপত্তা দিয়ে আসছিলাম। দুপুর একটার দিকে হঠাৎ করেই সিএন্ডবি মোড়ে আব্দুল বাতেনের উপর হামলার চেষ্টা করা হয়। আমরা তাৎক্ষণিক তাঁকে একটি দোকানে নিয়ে হামলা থেকে রক্ষা করেছি।
নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আব্দুল বাতেন অভিযোগ করে বলেন, ছেলে রঞ্জনের পক্ষে নির্বাচনে জনসমর্থন নেই। তাই নিজের পুত্রকে বিজয়ী করতে পাবনা-১ আসনের সাংসদ শামসুল হক টুকু বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নির্বাচনী এলাকায় এনেছেন। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।
তিনি অভিযোগ করে জানান, নির্বাচন থেকে তাঁকে সরিয়ে দিতে প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। একাধিক বার তাঁকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি তাঁর বাড়ির সামনে নৌকার প্রার্থী রঞ্জনের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা স্বশস্ত্র মহড়া দিয়ে তাঁকে (আব্দুল বাতেন) হত্যার হুমকী দিয়েছে। এ সব ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রমাণাদি নজরে আনা হলে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁকে পুলিশী নিরাপত্তা দেওয়া হয়।
তিনি আরো জানান, সাংসদ টুকুর সন্ত্রাসীরা এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, তারা এখন পুলিশের উপস্থিতিতেই তাঁকে জবাই করতে চাইছেন। হামলার ধারাবাহিকতার প্রেক্ষিতেই আজ সাংসদ টুকুর নির্দেশে তাঁর অনুসারী সন্ত্রাসী ময়ছার, রমজান, হাকিম বস, আল আমিন, ইমরান, হান্নান, বরকত, রাসুর নেতৃত্বে তাঁর প্রচারণার উপর হামলা হয়েছে।
আব্দুল বাতেন আরো জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হওয়ায় সাংসদ শামসুল হক টুকু আইন শৃংখলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে দিচ্ছেন না। তাঁর নির্দেশেই বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এলাকায় অরাজক সৃষ্টি করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটারদের নিরাপত্তার স্বার্থে নির্বাচন কালীন সময়ে বেড়া পৌর এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবী জানান আব্দুল বাতেন।
বেড়া থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার জানান, নৌকা ও নারিকেল গাছ প্রতীকের সমর্থকরা সিএন্ডবি বাজারে মুখোমুখি হলে সামান্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যববস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও সাংসদ টুকুপুত্র আসিফ শামস রঞ্জনকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
নৌকার পক্ষে বেড়া পৌরসভায় প্রচারণায় আসা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন জানান, হামলার কোন ঘটনা তাঁর জানা নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজেই হামলার নাটক সাজিয়ে ভোটারদের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেন এসএম কামাল।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, বেড়া পৌর মেয়র পদে লড়ছেন স্থানীয় সাংসদ টুকু পরিবারেই তিন প্রার্থী। নৌকা প্রতীক নিয়ে সাংসদ টুকুর ছেলে আসিফ শামস রঞ্জন, নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে সাংসদের ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আব্দুল বাতেন এবং মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে সাংসদের ভাতিজি এস এম সাদিয়া আলম। এছাড়া রেল ইঞ্জিন প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এ এইচ এম ফজলুর রহমান মাসুদ, জগ প্রতীক নিয়ে প্রার্থীতায় রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কে এম আব্দুল্লাহ। আগামী ২৮ নভেম্বর পৌরসভাটিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্টিত হবে হবে।