শনিবার , ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. নির্বাচন
  14. পাবনা
  15. ফিচার

দেড় বছর পর স্কুলের ঘণ্টা বাজবে আজ

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১ ৬:৫৩ অপরাহ্ণ

অনেক দিন পর স্কুল খুলছে। স্কুলের শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। অনলাইন ক্লাসের নতুন বন্ধুদের সঙ্গেও সামনাসামনি দেখা হবে। সবাই একসঙ্গে মজা করে ক্লাস করতে পারব। এত দিন তো বাসায় বন্দী ছিলাম। বাইরে খেলতে যেতে পারতাম না। এখন বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে পারব’—ছোট্ট দিহানের এই কথা বয়সের তুলনায় অনেক ভারী মনে হলেও এটাই বাস্তবতা। সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রাফিন সরকার দিহানের মতো অনেক শিক্ষার্থীকেই এই করোনাকাল বয়সের চেয়ে অনেক বেশি মানসিকভাবে পরিণত করে তুলেছে। ফলে এমন কথা আর বিস্ময় তৈরি করে না।
দীর্ঘ দেড় বছর পর আবারও স্কুলের ঘণ্টাগুলো বেজে উঠবে আজ। ছোট ছোট শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হবে স্কুলপ্রাঙ্গণ। দেড় বছরেরও বেশি সময়ের পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। প্রাণ ফিরে পাবে নিরেট জড় কাঠামোগুলো। শ্রেণিকক্ষগুলো আবার মুখরিত হবে হই হুল্লোড়ে। দম বন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। মন খারাপের দিনকে মনে হবে সুদূর। অনেক দিনের জমানো কথা বলতে বলতে শেষ হবে না আর। এত সব আনন্দের হাতছানির মধ্যেও দিহান কিন্তু বলে দিয়েছে—সে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে। বন্ধুদেরও বলবে মেনে চলতে। বুঝতে বাকি থাকে না যে, দিহানের ভয়—আবার যদি স্কুল বন্ধ হয়।

রাজধানীর শিশু-কিশোরদের সবাই দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছে একটি যথাযথ সকালের জন্য। দীর্ঘ দেড় বছর পর অবশেষে সে সকাল এসেছে। বহু শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো কলেজে যাবে আজ। এমনই একজন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অবনী রাহনুম। গতকাল শনিবার নিজের অনুভূতি নিয়ে বলল, ‘করোনা সংক্রমণের আগে আমাদের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়। সবার মতো আমারও ইচ্ছা ছিল এসএসসির পর কলেজে যাব। শুনেছি কলেজজীবন অনেক সুন্দর। কিন্তু তা আর হলো না। আজ দীর্ঘ ১৮ মাস পর কলেজে যাব। প্রথম অনুভূতি ছিল অবিশ্বাস। এখন খুব আশা নিয়ে আছি। এত দিন একটানা ঘরে থাকতে ভালো লাগছিল না। আজ সবার সঙ্গে দেখা হবে। নতুন শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা হয়। কিন্তু অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি একবারও। সেই ইচ্ছাটা অবশেষে পূরণ হবে। শুনেছি আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে।
দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়েছিল। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখন যেহেতু সময়টা করোনার। তাই এই আনন্দের মধ্যেও ভয়ভীতি আচ্ছন্ন করে রাখবে অভিভাবকদের। শিশুরা ঠিকঠাক মাস্ক পরে থাকবে কি না, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলবে কি না, হাত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে কি না, শিশুদের জন্য স্কুল নিরাপদ হবে কি না—এসব অজানা আতঙ্ক ভর করে থাকবে অভিভাবকদের মনে।

তবে এসব শঙ্কা কমিয়ে আনতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। রয়েছে সরকারি নির্দেশনা। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক সৈয়দা তানজীনা ইমাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রায় ১৮ মাস পর স্কুল খুলছে। গত ৫-৭ দিন ধরে সরকারি নির্দেশনা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে স্কুলগুলো নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গুর কথা বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানের সব জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মশার ওষুধ দেওয়া হয়েছে। গেট থেকে ভবন এবং করিডরগুলোয় চলাচলের পথে দূরত্বের চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে জিকজ্যাক করে আসন বিন্যাসের চিহ্ন দিয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। হাত ধোয়ার জন্য নতুন অনেক বেসিন বসানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য হ্যান্ডওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ কেনা হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির স্কুলপ্রাঙ্গণে মূল গেটের কাছে ব্যানার লাগানো হয়েছে। গেটের বাইরেও অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সরকার প্রদত্ত নির্দেশাবলি সংবলিত ব্যানার লাগানো হয়েছে। স্কুলপ্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সতর্কীকরণের স্লোগান লেখা ফেস্টুন লাগানো হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা হাত ধোয়া, মাস্ক পরা ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন থাকতে পারে। তানজীনা ইমাম বলেন, ‘স্কুল প্রাঙ্গণে জনসমাগম কমাতে যেদিন যে দুটি শ্রেণি স্কুলে আসবে, সেই শ্রেণিকে দুই ভাগ করে দিনের দুটি সময়ে আনা হবে। স্কুলে প্রবেশ ও বের হওয়ার গেট পৃথক করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী পঞ্চম, দশম (নতুন), দশম (পুরোনো) শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন আসবে। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন করে স্কুলে আসবে।

শিক্ষাবিদেরা বলছেন, ২০২০ সালের মার্চ মাস ও ২০২১ সালের মার্চ মাসের সাবির্ক পরিস্থিতি কিন্তু এক নয়। এই সময়ে অনেকে হারিয়েছে তাদের প্রিয়জনকে। আবার অনেক পরিবার অর্থনৈতিকভাবে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। তাই অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে অনেকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়গুলোর দিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজর রাখা উচিত। শিক্ষার্থীরা যেন আগের মতো স্কুলকে ভালোবাসতে পারে। স্কুল কর্তৃপক্ষের সেই ব্যবস্থা করা দরকার।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে নটর ডেম কলেজের আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসেনি। তাই এই সময়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষার্থীর ক্লাস করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাস দুভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে আগে ১৫০ থেকে ১৬০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করত, সেখানে এখন ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস নেওয়া হবে। এ ছাড়া সকাল ৮টা থেকে প্রথম ক্লাস শুরু হলে, পরের ক্লাস শুরু করা হবে ১০টা থেকে। অর্থাৎ, একটা শ্রেণির ক্লাস শেষ হওয়ার ৩০ মিনিট পর অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঢুকবে।

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

দুঃখিত,এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি করা নিষিদ্ধ