উপজেলা পরিষদ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম যেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে করা হয়, সে জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) উদ্দেশে সার্কুলার জারি করতে সরকারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সার্কুলারে হাইকোর্টের আদেশের বিষয়টি উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদসচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৬ জন বিবাদীকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের করা এক আবেদনে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ও ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
আদেশের পর মনজিল মোরসেদ জানান, উপজেলা পরিষদ আইন ও এর অধীনে করা বিধিমালা অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে উপজেলা পরিষদের অধীনে ন্যস্ত সব বিভাগের কার্যক্রম ইউএনওরা পরিচালনা করবেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় একাধিকবার সার্কুলারও জারি করেছে। কিন্তু ইউএনওরা সেটা করেন না। তাঁরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে পরে উপজেলা পরিষদকে অবহিত করেন, যা সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী। এ কারণে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত শুনানি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিবসহ ১৬ জন বিবাদীর প্রতি এ আদেশ দিয়েছেন।
আইনজীবীরা জানান, প্রতিটি উপজেলায় থাকা ১৭টি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাঁদের কাজ উপজেলা পরিষদের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে এসব দপ্তরের কার্যাবলি পরিচালনা করার কথা। কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন পরিপত্র জারি করে ওই ১৭টি দপ্তরে যেসব কমিটি করা হয়েছে, এর সবগুলোতেই সভাপতি করা হয়েছে ইউএনওকে। আর উপদেষ্টা করা হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যানকে। একইভাবে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হচ্ছেন ইউএনও এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা। ফলে আইন থাকা সত্ত্বেও প্রায় এক যুগ ধরে ইউএনওরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এ অবস্থায় গত বছরের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, দুমকী উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ও অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু, উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রিনা পারভীন, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহম্মেদ ও ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেন। এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৬ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও আর্থিক শৃঙ্খলা আনাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ইউএনওদের সাচিবিক দায়িত্ব পালনের বিধানসংবলিত আইনের ৩৩ ধারা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করতে জারি করা পরিপত্র কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়।
ওই রুল জারির দিনেই গত ৬ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় উপজেলা পরিষদের অধীনে ন্যস্ত সব দপ্তরের কার্যক্রম পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে পেশ করতে এবং চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে করার জন্য ইউএনওদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু এসব নির্দেশনা ইউএনওরা না মানায় আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গতকাল সরকারকে সার্কুলার জারি করতে আদেশ দেন।