কিরগিজস্তানের ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের জন্য জাতীয় দলে ডাক পাওয়া কানাডা প্রবাসী ফুটবলার রাহবার ওয়াহেদ খান সেহরানের ঢাকার বনানীর বাসায় এখন যেন ঈদের আনন্দ। সেহরানের বাবা আকরাম আলী খান ও মা বনানীতে থাকেন। আকরাম-তানিয়া দম্পতির দুই সন্তানই (ছেলে) দেশের বাইরে থেকে পড়াশোনা করে। বড় ছেলে সেহরান কানাডায়, ছোট ছেলে রাফসানি ওয়াহেদ খান সায়ের যুক্তরাষ্ট্রে।
দুই ভাই দুই দেশেই ফুটবল খেলেন। বড় ভাই রাহবার স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসে কিরগিজস্তানে অনুষ্ঠিতব্য ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টেই লাল-সবুজ জার্সি গায়ে অভিষেক হতে পারে তার। ছেলের জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর থেকে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের ফোন পাচ্ছেন আকরাম আলী খান। সেহরানের বাবা-মায়ের মধ্যে ভর করেছে যেন ঈদ-আনন্দ।
কোচ জেমি ডে’র পছন্দমতো দুই প্রবাসী ফুটবলার কানাডার সেহরান ও ফ্রান্সের নায়েব তাহমিদ ইসলামের সঙ্গে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছিল বাফুফে।
‘বাফুফে যোগাযোগ শুরুর পরই আমাকে আভাস দিয়েছিল সেহরান। ২৩ আগস্ট চিঠি পাওয়ার পর আমাকে নিশ্চিত করে। আর মিডিয়ায় খবর প্রকাশের পর থেকে মোবাইল সেট রাখতেই পারছি না-ফোন আর ফোন। আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধু-বান্ধবরা অভিনন্দন জানাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আমরা কত খুশি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না ’- বলছিলেন সেহরানের বাবা আকরাম আলী খান।
দুই ছেলেই অল্প বয়স থেকে ছিল ফুটবল পাগল। যখন দেশে পড়াশুনা করতো তখন তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হয়ে নিয়মিত ফুটবল খেলতো। আকরাম আলী খান বলছিলেন, ‘দুই ভাইয়ের বয়সের পার্থক্য ৫ বছর। তারা ছোট সময় বাসার মধ্যে ফুটবল নিয়ে খেলে জিনিসপত্র ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলতো।
কানাডায় স্পোর্টস অ্যান্ড অ্যাডুকেশনের ওপর স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশুনার পাশপাশি একটি চাকরিও করতেন সেহরান। জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর দিনই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। ‘সেহরানের ইচ্ছে ছিল ইউরোপে খেলার। সে কারণে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের বড় দুটি ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেয়েও রাজি হয়নি। তবে আমি বলেছিলাম, কখনও বাংলাদেশ দলে ডাক পেলে অবশ্যই খেলবা। ওটা তোমার দায়িত্ব। সেহরানেরও স্বপ্ন ছিল একদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলবে। ডাক পাওয়ার পর সেই স্বপ্ন পূরণের পথে সে’- ছেলেকে নিয়ে বললেন আকরাম আলী খান।
আকরাম আলী খানের অনেক স্বপ্ন তার দুই ছেলেকে নিয়ে। এর মধ্যে ২৫ বছরের সেহরান জাতীয় দলে ডাক পেয়েছে। মাঠে নামার সুযোগ পেলে ছেলে ভাল খেলবে বলেও আশাবাদী আকরাম আলী খান। কারণ, সেহরানের স্কোরিং দক্ষতা নাকি ভাল।
ঢাকায় স্কুলের একটি ম্যাচের স্মৃতি রোমান্থন করে আকরাম আলী খান বলেন, ‘সেহরান তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ছেলের খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। মাঠে নামার আগে আমার কাছে জিজ্ঞেস করেছিল- বাবা, কয় গোল করবো? আমি হাতের চারটি আঙ্গুল দেখিয়েছিলাম। সে ম্যাচে ঠিকই চার গোল করেছিল। মজার বিষয় হলো চারটির পর আরও সুযোগ পেয়েও গোল আর করেনি। মনে হয়, আমি চারটি গোল করতে বলেছিলাম বলে চারটিই করেছে (হাসি)।