শেখ মেহেদী হাসান ঃ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে কো-আপ করাটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই কো-আপ হবে না। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর দলের কাউন্সিল। কাউন্সিলের মাধ্যমেই নেতা নির্বাচন করা হবে। এখন ফিরে গিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দলের পক্ষে কাজ করেন।
গতকাল সোমবার ঈশ্বরদী থেকে ধানমন্ডিতে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের এমনভাবেই নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজশাহী বিভাগ) এস এম কামাল। তারিখটি কেন্দ্র থেকে নির্ধারিত হলেও পাবনা জেলা ও ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে কাউন্সিল ৩০ তারিখের আগে বা পিছে হতে পারে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর জহুরুল হক পুনো মুঠোফোনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ সময় ঈশ্বরদীর নেতাদের মধ্যে ঈশ্বরদী পৌর সভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা, আওয়ামী লীগ নেতা মকলেছুর রহমান মিন্টু, শফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর জহুরুল হক পুনো, প্রকৌশলী কবির আলী, ফরিদুল আলম ফরিদ, আব্দুল হান্নান, সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, আব্দুস সালাম খান, চেয়ারম্যান মতলেবুর রহমান মিনহাজ, চেয়ারম্যান বকুল সরদার, চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা, চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার, চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস ও তরিকুল ইসলাম ভাদু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে বাইরে থেকে বহু মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ জনগণকে হত্যাকারী নকশাল পরিবারের এক সদস্যকে যুগ্ম সম্পাদক পদে কো-আপ করার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এই অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় তা সহিংস রূপ নিতে পারে বলে আতঙ্কিত নেতাকর্মীরা।
ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর একাধিক সূত্রে জানা যায়, স্বেচ্ছাসেক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঈশ্বরদীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি স্মরণে বিএনপি নেতাদের নিয়ে ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু পূর্ব টেংরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরপর থেকেই একটি পক্ষ থেকে দল থেকে আবুল কালাম আজাদ মিন্টুকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। আর সাবেক মেয়র মিন্টুর পক্ষের একজনকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদে কো-আপসহ দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান মিন্টুর বহিষ্কারের দাবিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে থাকা নেতার সঙ্গে জোড় তদবির শুরু করেন। এই ঘটনায় ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিংসহ তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রগুলোর দাবি, বিষয়টি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) এস এম কামালের সুদৃষ্টিও কামনা করা হয়।
খোজঁ নিয়ে জানা যায়, গত ২০১৩ সালে ১১ জুন ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আনিচুন্নবী বিশ্বাসকে সভাপতি, মকলেছুর রহমান মিন্টুকে সাধারণ সম্পাদক ও মীর জহুরুল হক পুনোকে ১ নং সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৬৭ সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। যা পরবর্তিতে প্রয়াত সাবেক ভূমিমন্ত্রী পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ ডিলু অনুমোদন স্বাক্ষরের মাধ্যমে অনুমোদন দেন। এই কমিটিতে বর্তমান ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খানের নাম নেই। কিন্তু তাকে হঠাৎ করে একটি পক্ষ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে যুগ্মস ম্পাদকের মতো পদে কো-আপ করার চেষ্টা করেন। যা আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত নিন্দনীয় এক চেষ্টা।
ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর জহুরুল হক পুনো মুঠোফোনে জানান, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে কমিটির বাইরে থেকে আকর্ষিকভাবে কাউকে দায়িত্বশীল কোনো পদে কো-আপ করার বিধান নেই। একটি পক্ষ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সম্প্রতি আব্দুস সালাম খান নামের একজনকে বাইরে থেকে এনে যুগ্ম সম্পাদক পদে কো-আপ করাতে গিয়ে খন্দকার মোস্তাকের দোসর হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এই নিয়ে ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান পুনো।
সাংগঠনিক সম্পাদক মীর জহুরল হক পুনো আরো জানান, কেন্দ্রের নির্দেশে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ ঈশ্বরদী উপজেলা কমিটি গঠনের জন্য খুব শিগগিরই কার্যক্রম শুরু করবেন বলেও আশাবাদী।
ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র ইছাহক আলী মালিথা মুঠোফোনে জানান, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক যুগ্ম সম্পাদক পদে কো-আপ করার দাবি নিয়ে একটি চক্র কেন্দ্রীয় নেতার নিকট গিয়েছিলেন। কিন্তু চক্রটির দাবি প্রত্যাখান হওয়ায় তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন।
মেয়র আরো জানান, চক্রটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান মিন্টুকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে বলে অপ্রচারও চালিয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মকলেছুর রহমান মিন্টু জানান, দলের কিছু ব্যক্তি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে বলেও নিন্দা জানান মিন্টু।
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স মুঠোফোনে জানান, আব্দুস সালাম খান নামের কেউ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নেই। এমন কি এই নামে সদস্য পদেও নেই। কমিটির বাইরে থেকে কাউকে সম্পাদকীয় পদে কো-আপ করার বিধান নেই। ঈশ্বরদীতে এই রকম পরিস্থিতি আসেনি যে কাউন্সিল ছাড়া কাউকে যুগ্ম সম্পাদকের মতো পদে কো-আপ করতে হবে।
সাধারণ সম্পাদক প্রিন্স আরো জানান, ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বড় দলের মধ্যে গ্রুপিং থাকবেই। তবে বিষয়টি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজশাহী বিভাগ) এস এম কামাল ব্যক্তিগত মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।