নিউজিল্যান্ড কোচের আগুন জবাবের হুংকার, প্রতিপক্ষের বাঁহাতি স্পিনের ফাঁদ আর মিরপুরের বিভীষিকাময় উইকেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। জয় এসেছে ৬ উইকেটের ব্যবধানে। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ শেষে ফলাফল এখন ৩-১। জিম্বাবুয়ে আর অস্ট্রেলিয়ার পর এই নিয়ে টানা তৃতীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল টিম টাইগার। আজও এক পর্যায়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ের শঙ্কা জেগেছিল। তবে চিত্রটা বদলে দেন মাহমুদউল্লাহ আর নাঈম। তাদের ব্যাটেই আগামী ১০ সেপ্টেম্বর শেষ ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য স্রেফ নিয়মরক্ষার।
রান তাড়ায় দেখেশুনে শুরু করেন নাঈম আর লিটন। অন্যদিকে ব্যাট করার সময় চোট পাওয়ায় টম ব্লান্ডেল আর ফিল্ডিংয়ে নামেননি। তার বদলে নামেন ডগ ব্রেসওয়েল। প্রথম দুই ওভারে আসে মাত্র ৪ রান! কোল ম্যাকনকির করা তৃতীয় ওভারের প্রথম বলটি মিডউইকেট দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠান লিটন দাস। পরের বলেই স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে অ্যালেনের তালুবন্দি হন ১১ বলে ৬ রান করা এই ওপেনার। তৃতীয় ওভারে দলীয় ৮ রানে বাংলাদেশের প্রথম উইকেটের পতন হওয়ার পর সাকিব আর নাঈম দ্রুত রান তোলার মিশনে নামেন। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে আজাজ প্যাটেলের বলে সাকিব (৮) স্টাম্পড হলে ফের ছন্দপতন। ওভারের শেষ বলে মুশফিক (০) বোল্ড হয়ে গেলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ৩২ রানে নেই ৩ উইকেট।
এমতাবস্থায় ফের গত ম্যাচের মতো ব্যাটিং বিপর্যয়ের শঙ্কা পেয়ে বসে। ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ এবং নাঈম। বাংলাদেশও বিপর্যয় কাটিয়ে জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। জুটিতে ৩৫ রান আসতেই ছন্দপতন। দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে যান ৩৫ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ২৯ রান করা নাঈম। অধিনায়কের সঙ্গী হন আফিফ হোসেন। দুজনে সিঙ্গেলস-ডাবলস নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। ১২ বলে দরকার ছিল ১২ রান। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ব্লেয়ার টিকনারকে ছক্কা মেরে সেটা ৫ রানে নামান মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ বলটি ছিল বাউন্সার; লাগে আফিফের হেলমেটে। মাঠে ছুটে আসেন ফিজিও। কিন্তু আফিফ মাথা নেড়ে জানান, কনকাশন সাবের প্রয়োজন নেই। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৩ রান। প্রথম বলে কোল ম্যাকনকিকে বাউন্ডারি মেরে দলকে জিতিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ। ৫ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। আজাজ প্যাটেল নিয়েছেন ২ উইকেট, কোল ম্যাকনকি নিয়েছেন ১টি।
এর আগে মিরপুর শেরেবাংলায় সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯.৩ ওভারে ৯৩ রানে অল-আউট হয় নিউজিল্যান্ড। নাসুম আহমেদকে দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করে বাংলাদেশ। ওভারের পঞ্চম বলেই আসে সাফল্য। পাঁচ বল খেলে কোনো রান না করা রাচিন রবীন্দ্রর তুলে দেওয়া ক্যাচ মিডউইকেটে দারুণ দক্ষতায় তালুবন্দি করেন সাইফউদ্দিন। ওই ওভারে আর কোনো রান আসেনি। মেডেন উইকেট তুলে নেন নাসুম। উইকেটে আসেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। দ্বিতীয় ওভারে বল হতে আসেন সাকিব। পঞ্চম বলে রিভার্স সুইপে ছক্কা হাঁকান ফিন অ্যালেন। ওভার থেকে আসে ১০ রান। ফিরতি ওভারে এসেই ৮ বলে ১ ছক্কায় ১২ রান করা ফিন অ্যালেনকে তুলে নেন নাসুম। ক্যাচ নেন সেই সাইফউদ্দিন। ১৬ রানে কিউইদের দ্বিতীয় উইকেটের পতন।
ল্যাথাম আর ইয়ং জুটি গড়ে কিউইদের এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় মনোযোগ দেন। প্রথম এবং সপ্তম ওভারের মাঝেই দুটি রিভিউ শেষ করে ফেলে বাংলাদেশ। দুটিই ছিল লেগ বিফোরের আবেদন। একাদশ ওভারে টাইগারদের ব্রেক থ্রু দেন স্পিনার শেখ মেহেদি আর নুরুল হাসান সোহান। মেহেদির বলে ২৬ বলে ২১ করা ল্যাথামকে স্টাম্পড করে দেন সোহান। ভাঙে ৪৭ বলে ৩৫ রানের জুটি। পরের ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন নাসুম আহমেদ। তার বলে বোল্ড হয়ে হেনরি নিকোলাস (১)। পরের বলেই কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম (০) ক্যাচ দেন নুরুল হাসান সোহানের হাতে। হ্যাটট্রিকের সুযোগ ছিল। ওভারের চতুর্থ বলটি টম ব্লান্ডেলের ব্যাটের খুব কাছ দিয়ে গেলেও স্পর্শ করেনি। ৫২ রানে কিউইদের ইনিংসের অর্ধেক শেষ হয়।
১৪তম ওভারে বল করতে আসেন সাইফউদ্দিন। শেষ বলে স্ট্রেইট ড্রাইভ খেলেছিলেন উইল ইয়াং। সেটা ধরতে গিয়ে আঙুলে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন সাইফউদ্দিন। এরপর জোড়া আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। ১৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ব্লান্ডেলের (৪) দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মোহাম্মদ নাঈম। শেষ বলে কোল ম্যাকনকিকে (০) অসাধারণ দক্ষতায় কট অ্যান্ড বোল্ড করেন দ্য ফিজ। একপ্রান্ত আগলে একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন উইল ইয়ং। চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া সাইফউদ্দিন ফিরে এসে ১৯তম ওভারে বোল্ড করে দেন আজাজ প্যাটেলকে (৪)। শেষ ওভারের দায়িত্বে যথারীতি মুস্তাফিজ। দ্বিতীয় বলে ফিফটির কাছাকাছি থাকা উইল ইয়ং ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহর হাতে। ৪৭ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় তার সংগ্রহ ৪৬ রান। পরের বলেই ব্লেয়ার টিকনার (০) মেহেদি হাসানের তালুবন্দি হন। ১৯.৩ ওভারে ৯৩ রানে অল-আউট হয় নিউজিল্যান্ড। ৪ ওভারে ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন নাসুম আহমেদ। মুস্তাফিজ ৩.৩ ওভারে ১২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। বাকি দুই উইকেট ভাগাভাগি করেছেন মেহেদি আর সাইফউদ্দিন।