শনিবার , ২৮ মে ২০২২ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. নির্বাচন
  14. পাবনা
  15. ফিচার

ঈশ্বরদী-সস্তায় শ্রম বিক্রি, সুবিধা নিচ্ছেন লিচু বাগান মালিকরা

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
মে ২৮, ২০২২ ৪:৫০ অপরাহ্ণ
ঈশ্বরদী-সস্তায় শ্রম বিক্রি, সুবিধা নিচ্ছেন লিচু বাগান মালিকরা

ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১২টা। ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক সড়কের পাশে লিচু বাগানে বসে গুনে গুনে ৫০টি আটি বেঁধে থোকায় থোকায় করে সাজিয়ে লিচু বাছাইয়ের কাজ করছেন দুই সন্তানের জননী সাথী বেগম (৩০)। ছয় ঘণ্টার বিনিময়ে মিলবে তাঁর পারিশ্রমিক মিলবে ৩০০ টাকা। এভাবেই জ্যৈষ্ঠের মধুমাস জুড়ে লিচুর বাগানে শ্রম দেন অসহায় হতদরিদ্র নারীরা। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সস্তায় শ্রম বিক্রি করেন তাঁরা। আর সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সুবিধা ভোগ করেন লিচু বাগান মালিকরা।

মায়ের কাছে বসে লিচু বেছে দেওয়ার কাজ করে সহায়তা করছে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনিক ইসলাম। তার কাজ আবার গাছ থেকে লিচু পেড়ে আনা। অবশ্য তার হাজিরা বেশি। মিলবে ৫০০ টাকা। তাদের মতো অনেকের সংসারে যোগান দেয় শ্রম ঘামে ঝরানো সামান্য কিছু টাকা।

ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী সাঁহাপুর সলিমপুর কয়েকটি লিচু বাগানে গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। সারিবদ্ধভাবে লিচুর বাগানে বসে কাজ করছেন গ্রামের বউ-ঝি এবং বয়স্ক লোকজনরা। গ্রামের শিশু-কিশোররা বাদ পড়েনি এই কাজ থেকে। শুধুই সাথী কিংবা অনিক না। তাদের মতো তিনটি ইউনিয়নে বাড়তি আয়ের আশায় সংসারে যোগান দিতেই কাজটি করছে।

স্বামীর সামান্য আয়ে সংসার চালাতে অনেকের হিমসিম খেতে হয়, কারও স্বামী সিএনজি চালক, কারো স্বামী অটোরিকশা চালক, আবার কারও স্বামী রাজমিস্ত্রির জোগান দেন। সংসারে একটু স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে গ্রামের বউ-ঝিরা সংসারের সব কাজকর্ম শেষে শ্রম দেন। আবার বাড়িতে ফিরে সংসারের হাড়ভাঙা খাটুনি। আর যে শিশু-কিশোররা শ্রম দিচ্ছেন। তারা অনেকেই পরিবারের লোকজনের সঙ্গেই এসেছেন।

সরেজমিনে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার লিচুগ্রাম ঘুরে দেখা যায়, যেন দম ফেলার সময় নেই শ্রমিকদের। সারিবদ্ধভাবে বসে গ্রামের বউ-ঝি, পুরুষ, শিশুরাও এ কাজে অংশ নিয়েছেন। গল্পের ছলে ভালোই তাদের সময় কাটছে।

লিচুর সময়ে দূর-দূরন্তর থেকে লিচু খেতে এসেছে ওই গ্রামের মেয়ে জামাইরা। তারাও এলাকার গৃহবধূ চাচি-খালাদের সঙ্গে গল্পে মশগুল হয়ে কিছুটা সহযোগিতা করছে।

পাকশীর বাঘইল গ্রামের গৃহবধূ সাথী বেগম বলেন, আমার ২ ছেলে ১ মেয়ে। দুটি ছেলে মেয়ে স্কুলে দেয়নি এখনো। বড় ছেলে ছেলে ক্লাস নাইনে পড়ে। আমার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করে দৈনিক হাজিরায়। আমি সকালে সংসারের কাজ শেষ করে বাগানে এসে লিচু গোছানোর কাজ করি। বাড়ির পাশে লিচুর বাগান। নিজের এলাকায় বলে কাজটি করা হয়। একমাসে যে টাকাটা আয় করতে পারব, তা দিয়ে সংসারে যেকোনো কাজে লাগানো যাবে।

শিক্ষার্থী অনিক জানায়, লিচু গাছের ডালপালা অনেকটা নরম। চিকন চিকন ডাল থেকে লিচু পাড়তে আমাদের যতোটা সহজ হয়, বড়দের হয় না। অনেকে গাছ থেকে পড়ে যায়। তাই লিচু বাগান মালিকদের কিছুটা সুবিধার জন্য আমরা একটু সহযোগিতা করি। বিনিময়ে মিলবে ৫০০ টাকা। ২/৩ ঘণ্টার জন্য এই কাজটি করে যদি ৫০০ টাকা মেলে, ক্ষতি কি। সবসময় তো এমন কাজ করা হয় না।

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া সম্পুন্ন অনুকূলে থাকায় ঈশ্বরদী উপজেলায় বাম্পার লিচু ফলন হয়েছে। জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাগান থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে লাল টসটসে লিচু।

ঈশ্বরদী ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমির ১১ হাজার ২৫৮ লিচুর বাগানে ১২ হাজার কৃষক লিচুর আবাদ করেছেন। এতে ঈশ্বরদীতে মিলবে ১৭১ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার রসালো সুস্বাদু লিচু। কৃষকরা লাভবান হলেও সামান্য শ্রমে সুবিধা নিচ্ছে মহাজনরা।

উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামে লিচু বাগানে বসে কাজ করছে সুলতানা রাজিয়া জানান, আমার স্বামী সিএনজি ড্রাইভার। বাড়ি বসে আমি সেলাই মেশিনে কাজ করতাম। সংসারের কাজ শেষে অবসর সময়ে। এখন কাজ নাই। বাইরে কখনো কোথাও কাজ করতে যাওয়া হয়নি। বাড়ির পাশে বলে আজই প্রথম এসেছি।

গৃহবধূ রেখা বেগম জানান, সারাদিনে ৩০০ টাকা কোথা থেকে আসে। তাছাড়া আমাদের লিচুর বাগান নেই। আবার কিনে যে খাবো সামর্থ্য নেই। বাড়িতে যাওয়ার সময় কিছু লিচু পাওয়া যায়। ধরেন- ‘কলা বেচা হলো রথও দেখা হলো’।

সাঁহাপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের আতিয়ার প্রমানিক জানান, আমি ক্ষেতে কাজ করতাম। গরমে তেমন কাজ নাই। কয়েকটি দিন যদি একটু স্বস্তিতে থাকতে পারি। তাই এ কাজে এসেছি। সারাদিনে ৫০০ টাকা হাজিরা মেলে।

ঈশ্বরদী রূপপুর গ্রামের লিচুর বাগান মালিক পলাশ আহম্মেদ জানান, লিচু গাছের ডালপালা বেশ নরম। বয়স্ক লোকজনের পক্ষে লিচু গাছে চড়ে ডাল ভেঙে লিচু পাড়াটা যেমন সম্ভব না। নারীদের গাছে চড়ানো সম্ভব না। তাই অল্পবয়সী ছেলেরা লিচু গাছ থেকে ভেঙে নিয়ে আসছে। বয়স্ক লোকরা লিচু টেনে নিয়ে আসছে, ঝুড়ি বাঁধার কাজ করছে। তাই তাদের মজুরিটা বেশি। আর নারীরা বাহিরের কেউ না। এলাকার প্রতিবেশি স্বজন। তারা বসে বসে লিচু বাঁছাই করে সহায়তা করছে।

উল্লেখ্য, ঈশ্বরদী উপজেলায় ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে তিন জাতের লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ৩ লাখ ১২ হাজার ৪৮০টি গাছে গড়ে সাড়ে ৫ হাজার লিচু ধরেছে। জ্যৈষ্ঠ মাস জুড়ে গাছে থাকবে লিচু। লিচুর সুবিধাভোগী মহাজন বাগান মালিকরা সস্তা শ্রমে কিছুটা সুবিধা ভোগ করছেন, যা হয়তোবা ঠিক না। বিষয়টি ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসা দরকার বলে মনে করেন সচেতন মহল।

(প্রতিবেদনটি লেখেছেন সাংবাদিক টিপু সুলতান)

আরও পড়ুন :

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

দুঃখিত,এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি করা নিষিদ্ধ