ইউক্রেনের সাথে আলোচনার জন্য রাশিয়ার পাঠানো প্রতিনিধিদের একটি দল বেলারুশে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে মস্কো। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার আলোচনার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেছেন, রাশিয়া যদি বেলারুশ ভূখণ্ড থেকে ইউক্রেনে হামলা বন্ধ করে তবে মিনস্কে আলোচনা সম্ভব হতে পারে। এছাড়া এই সংকটের সমাধানে অন্যান্য স্থানে আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
ইউক্রেনের এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আপনার ভূখণ্ড থেকে যদি কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা মিনস্কে কথা বলতে পারি… অন্যান্য শহর আলোচনার স্থান হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই শান্তি চাই। আমরা সাক্ষাৎ করতে চাই। আমরা যুদ্ধ শেষ করতে চাই। আমরা আলোচনার স্থান হিসেবে ওয়ারশ, ব্রাতিসলাভা, বুদাপেস্ট, ইস্তাম্বুল, বাকুর নাম প্রস্তাব করেছি।
ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, অন্য এমন একটি দেশের যেকোনো শহর আমাদের জন্য যথাযথ হবে; যাদের ভূখণ্ড থেকে আমাদের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়নি। সৎ আলোচনার জন্য এটিই একমাত্র উপায় এবং সত্যিই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, কোনো ধরনের আল্টিমেটাম ছাড়াই সামরিক আগ্রাসনের ব্যাপারে রাশিয়ার সাথে প্রকৃত আলোচনা চায় ইউক্রেন। আলোচনার জন্য বেলারুশে মস্কোর প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্ত এক ধরনের প্রোপাগান্ডা।
এর আগে, ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাশিয়ার একটি প্রতিনিধি দল প্রতিবেশী বেলারুশের গোমেল শহরে পৌঁছেছে এবং সেখানে তারা ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের জন্য অপেক্ষা করছে। এ ব্যাপারে মিখাইলো পোডোলিয়াক বলেন, রুশ প্রতিনিধিরা গোমেলে পৌঁছেছে, এটি একেবারে অর্থহীন। এখন তারা বলছে, আমরা অপেক্ষা করছি।
‘জেলেনস্কির অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। কেবলমাত্র প্রকৃত আলোচনা হতে পারে, কোনো আল্টিমেটাম নয়।’
চতুর্থ দিনে দখল দুই শহর, অবরোধ আরও দু’টি
ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরুর চতুর্থ দিনে এসে দু’টি শহর দখলের পাশাপাশি ইউক্রেনের দক্ষিণে এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আরও দু’টি শহর পুরোপুরি অবরোধ করার কথা জানিয়েছে রাশিয়া। রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত খেরসন শহর এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বারদিয়ানস্ক শহর রুশ সেনারা পুরোপুরি অবরোধ করেছে বলে দাবি করেছে মস্কো। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে চলমান সামরিক অভিযান আরও জোরদারের ঘোষণা দেওয়ার পর এই দু’টি শহর অবরোধের খবর সামনে এলো।
বেশ কয়েকটি রুশ বার্তাসংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগোর কোনাশেঙ্কোভ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টা ধরে ইউক্রেনের খেরসন এবং বারদিয়ানস্ক শহর পুরোপুরি অবরোধ করে রেখেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।
এছাড়া ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরুর চতুর্থ দিনে নোভা কাখোভকা নামে দেশটির একটি শহর দখলে নিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। নিউ কাখোভকা নামেও পরিচিত এই শহরটি ছোট হলেও কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কাখোভকা শহরটি দিনিপার নদীর তীরে অবস্থিত এবং এই নদীটি পানি পথে সরাসরি ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
বিদেশি স্বেচ্ছাসেবীদের ডাকছে ইউক্রেন
কিয়েভ বলেছে, ইউক্রেনের সমর্থনে স্বেচ্ছাসেবক হতে ইচ্ছুক বিদেশীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সৈন্যদল গঠন করা হচ্ছে। রোববার ইউক্রেনের নতুন বিদেশি সেনাবাহিনী গঠনের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন।
এতে তিনি বলেছেন, ‘এটি আমাদের দেশের জন্য আপনার সমর্থনের প্রধান প্রমাণ হবে।
এর আগে, রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের গড়ে তোলা প্রতিরোধ বিশ্ববাসী বিশ্বাস করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকোভ। রুশ আগ্রাসনের চতুর্থ দিন তিনি এই মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সংঘাতের চতুর্থ দিনে ইউক্রেনীয় যখন জেগে উঠেছেন, তখন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউক্রেনে সহায়তা জোরদার করতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ওলেকসি রেজনিকোভ বলেছেন, দেশের ‘প্রতিরোধের ৭২ ঘণ্টা’ বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছে যে, রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করা সম্ভব।