বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের ১৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গঙ্গার পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ট্রলারে করে পদ্মা নদীর পাবনা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের অন্তত ৬টি পয়েন্টে পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেন তারা।
জানা যায়, সোমবার পাবনায় আসেন ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার দিনব্যাপী পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেন। পরে তারা কুষ্টিয়া হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
বুধবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) ৮৩তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পদ্মা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে এই পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শনের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
যৌথ নদী কমিশন সূত্র জানায়, প্রতিবারের মতো এ বছরও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী গত ১ জানুয়ারি থেকে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট ও ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে পানি পর্যবেক্ষণ শুরু করছেন যৌথ নদী কমিশনের সদস্যরা। প্রথম দুই মাস ভারতের পক্ষে পানি পর্যবেক্ষণ করবেন দেশটির পানি কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অঙ্কিত দুদেজা ও সহকারী পরিচালক মুকেশ কুমার শর্মা। বাংলাদেশের ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম।
সূত্র আরও জানায়, মঙ্গলবার পরিদর্শনে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন যৌথ নদী কমিশনের সদস্য ড. মাহবুবুর রহমান। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- যৌথ নদী কমিশনের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাঈদ, নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী শহীদুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি বিজ্ঞান শাখার প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হান্নান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. রাহেদ হোসেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি।
ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সে দেশের জয়েন্ট রিভার কমিশনের কমিশনার অতুল জৈন। এ ছাড়া ভারতের জয়েন্ট কমিশনার স্যাম ভারিয়া, ফারাক্কা ব্যারেজের জেনারেল ম্যানেজার আর ডি দেশ পাণ্ডে, হাইড্রোলজি বিভাগের পরিচালক এন এন রাই, উপ-সচিব (অর্থ) এ কে শাহু, ডেপুটি কমিশনার সরোদ কুমার খুশওয়াল এবং বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের একজন প্রতিনিধি পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনকালে দুই পক্ষের কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম সমকালকে বলেন, দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন করেছেন। বুধবার ঢাকায় এ বিষয়ে জেআরসির বৈঠকে বিস্তারিত আলাপ হবে।
তিনি আরও বলেন, গত ১ জানুয়ারি থেকে ঐতিহাসিক গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি কার্যকরের ২৭তম বছর শুরু হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ দিন (১-১০ জানুয়ারি) গড়ে পানি পাওয়া গেছে ৬৩ হাজার ১১৩ কিউসেক। মাঝের ১০ দিন (১১ থেকে ২০ জানুয়ারি) গড়ে পানি প্রবাহ ছিল ৪৮ হাজার ৫১৮ কিউসেক। এই ১০ দিনে প্রবাহ কমেছে ৪ হাজার ৫৯৫ কিউসেক। প্রথম ১০ দিন নদীর গভীরতা ছিল গড়ে ১৬ দশমিক ৩৭ মিটার। গত ১০ দিনে গভীরতা কমেছে দশমিক ৮৫ মিটার। প্রথম ১০ দিন মোট পানিপ্রবাহ ছিল ৬ লাখ ৩১ হাজার ১২৭ কিউসেক এবং দ্বিতীয় ১০ দিনে সেই প্রবাহ হয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ১৮২ কিউসেক। গত ১০ দিনে প্রবাহ কমেছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৫ কিউসেক।