২ নম্বর পুরাতন ঈশ্বরদী ইউনিয়ন। ইউনিয়নটি পাবনার ঈশ্বরদী ও নাটোরের লালপুর সীমানার মধ্যে পড়েছে। এখানেই বসবাস করে নদীভাঙনে ভূমিহীন ৪০টি পরিবার। তাদের জমির পাশেই রয়েছে সরকারি খাস জমি। সে জমি দখলে নিতে ভূমিহীনদের জায়গা বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী। এ অবস্থায় গত পাঁচ দিন ধরে কাজে বের হতে পাড়ছেন না ওই পরিবারগুলোর কেউই। ঘর থেকে বের হতে পারছে না তাদের সন্তানরাও।
জানা গেছে, নদীভাঙনের শিকার ৪০ পরিবার যখন সহায়-সম্বল হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিল তখন স্থানীয় প্রশাসন ওই পরিবারগুলোকে ২ নম্বর পুরাতন ঈশ্বরদী ইউনিয়নের খাস জমিতে ঘর তুলে বসবাসের মৌখিক অনুমতি দেয়। কিন্তু তাদের সেই জায়গা এখন হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। প্রভাবশালীদের দেওয়া তারের বেড়ার কারণে গত পাঁচ দিন ধরে অনেকটা বন্দি জীবনযাপন করছেন তারা।
সোমবার সরেজমন পুরাতন ঈশ্বরদীর বস্তিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এসব বাড়ির সামনে মোটা তারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। বেড়া ডিঙিয়ে বের হতে চাইলে বস্তির চারপাশের জমির মালিকরা বাধা দিচ্ছেন। ফলে গত বৃহস্পতিবার থেকে তারা বাড়ি থেকে বাইরে বের হতে পারছেন না। এ অবস্থায় নিম্ন আয়ের শ্রমিক ও দিনমজুর শ্রেণির এসব পরিবার কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। স্থানীয় প্রভাবশালী জয়নাল, বাচ্চু, তারেক, লিয়াকত, হাশেম আলী, রঞ্জিতসহ কয়েকজন মিলে এই বেড়া দিয়েছেন বলে জানায় স্থানীয়রা।
বস্তি এলাকার নির্মাণ শ্রমিক মসলেম হোসেন জানান, তারের বেড়ার কারণে বাড়ি থেকে বের হওয়ার জায়গা নেই। পেছন দিক দিয়ে একবার বেড়া কেটে বের হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু জমির মালিকদের বাধার কারণে সম্ভব হয়নি। ফলে কাজে যেতে পারছেন না।
বস্তির আরেক বাসিন্দা মরিয়ম বেগম জানান, তাদের বাড়িঘর নদীতে ভেঙে যাওয়ার কারণে এখানে সরকার তাদের বসবাসের অনুমতি দেয়। এখন বাড়ির সামনে তারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। ফলে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। বেড়া ডিঙিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
মুস্তব আলী জানান, তিনি কৃষি জমিতে কাজ করেন। পাশের জমির মালিক হাসেম, রঞ্জিতরা বেড়া দিয়েছেন। এখন তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। তিনি সরকারের কাছে এর সুবিচার দাবি করেন।
বিলাস নামের আরেকজন বলেন, এখানে অনেকদিন ধরে বসবাস করছেন। এখন জমির চারপাশের মালিকরা বেড়া দিয়ে বের হতে বাধা দিচ্ছেন। শিশু ও নারীসহ কেউই বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। পাঁচ দিন ধরে বস্তির ৪০টি পরিবারের কয়েকশ মানুষ এভাবে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। কাজেও যেতে পারছেন না।
এ ঘটনায় জড়িত হাসেম আলী বলেন, ‘আমি কারও জমি দখল করিনি। আমার জমির ফসল রক্ষার জন্য বেড়া দিয়েছি।’ জয়নাল আলী বলেন, ‘লোক চলাচলের কারণে আমার চাষাবাদের ক্ষতি হওয়ায় বেড়া দিতে বাদ্য হয়েছি।
ঈশ্বরদী ইউএনও পিএম ইমরুল কায়েস বলেন, ঘটনাটি ঈশ্বরদী ও লালপুরের সীমানা এলাকার, তাই এ বিষয়ে নাটোরের প্রশাসন ভালো বলতে পারবে।
এ বিষয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ জানান, বিষয়টি তিনি জানতেন না, কেউ অভিযোগ দেয়নি। তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র : সমকাল