বালু মহাল |
পদ্মা তীরবর্তী এলাকা দখল করে গড়ে ওঠেছে অবৈধ বালু মহাল।
পাবনার ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের ইসলামপাড়া এলাকায় বাঁধের কাছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বালু খেকোরা। এতে ২০১৭ সালে দুই শতাধিক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধ হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।
এর মূলহোতা প্রভাবশালী কথিত যুবলীগ নেতা হলেও এলাকার লোকজন ভয়ে কিছু বলতে সাহস করছে না। এরই মধ্যে সাঁড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ঘাট হতে ইসলামপাড়া এলাকা পর্যন্ত বাঁধের কাছে বালু উত্তোলন করায় নদীর গতিপথ বদলে যায়। এতে ওই এলাকার বেশ কিছু স্থানে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন।
এর ফলে পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সাঁড়ার ব্লকপাড়া, থানা পাড়া ও ইসলামপাড়া এলাকার কিছু অংশ ব্যাপকভাবে ভেঙে এর মধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে এরই মধ্যে বালুর বস্তা ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। অপরিকল্পিতভাবে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু উত্তোলনের কারণে এ অবস্থা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। বালু উত্তোলন প্রতিরোধে নৌ-পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
‘বালু কাটার বিষয়টি এখনও
আমাদের নলেজে নেই’
– এমদাদুল হক
ইনচার্জ, লক্ষীকুণ্ডা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি
গত ৫ জুন বালু কাটা বন্ধে পদ্মায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে পাবনার ঈশ্বরদী ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা প্রশাসন। এ সময় বালু কাটা ও পরিবহনের কাজে জড়িত শ্রমিকরা গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে।
পদ্মায় গড়ে উঠছে অবৈধ বালু মহাল
পদ্মা তীরবর্তী এলাকা দখল করে গড়ে ওঠেছে অবৈধ বালু মহাল। বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রকরা অবশ্য একে বালু মহাল বলছেন না, ‘বালুর খোলা’ নামে অভিহিত করছেন। অন্যান্য স্থান হতে বালু এনে এখানে স্তূপীকৃত করে ব্যবসা করছেন বলে দাবি করছেন তারা।
সরেজমিনে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের চলমান হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে চক্রটি। প্রায় ১৫ দিন ধরে নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হচ্ছে।
প্রাথমিক অবস্থায় দিনের বেলা বালু উত্তোলন করা হলেও বেশ কয়েকদিন ধরে রাতেও ‘চুপেচাপে’ নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। সাঁড়ার ওই এলাকায় পাহাড় সমান বালুর স্তূপ সাজিয়ে ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়াই শুধু ‘ম্যানেজ’ করেই বছরের বছর জমিয়ে চলছে রমরমা বালুর ব্যবসা। খরচ বলতে নৌকা ভাড়া, চাঁদা ও শ্রমিক খরচ।
ইসলামপাড়া এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করেছেন এই সংবাদদাতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, ‘বালু উত্তোলনের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা খুবই প্রভাবশালী।’
মঙ্গলবার মধ্যরাতেও নদীতে বালু কাটা হয়েছে। নদী থেকে মাত্র ১০-২০ মিটার দূরে বসতবাড়ি। ভাঙনে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বসতবাড়ি বিলীনের আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। এরই মধ্যে ভাঙনে প্রায় ৫০ একর জমি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অভিযান হয় কিন্তু তবে মূল হোতারা সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে বলে অভিযোগ এসেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, ভাঙন ঠেকাতে নিয়মানুযায়ী বালুর বস্তা ডাম্পিং করা হচ্ছে। নদীর অন্য প্রান্তের কিছুটা আগে জেগে ওঠা চর ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর গতিপথ বদলে গেছে। এখন নদীর স্রোত সরাসরি প্রবাহিত না হয়ে এই এলাকায় এসে আছড়ে পড়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে হলে বালু উত্তোলন বন্ধের পাশাপাশি গতিপথ পরিবর্তনের জন্য দ্রুত ওই চর এলাকায় ড্রেজিং করে স্রোতের গতিপথ বদলাতে হবে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে পাবনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীকে বারবার ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি তিনি।
রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিইএন-২) বীরবল মণ্ডল বলেন, ‘পদ্মার পানি প্রবাহ মূলত আপস্ট্রিমের পানি প্রবাহ। এভাবে যদি বালু কাটা হয় তাহলে হঠাৎ বন্যা হলে বাঁধটি ধ্বংস হবে।’
বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে তাদের কোনো সখ্যতা নেই জানিয়ে লক্ষীকুণ্ডা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমদাদুল হক বলেন, ‘বালু কাটার বিষয়টি এখনও আমাদের নলেজে নেই।’
ঈশ্বরদী থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, ‘নদীতে অভিযান পরিচালনার জন্য লক্ষীকুণ্ডা নৌ-পুলিশের ফাঁড়ি রয়েছে।’
ইউএনও সুবীর কুমার দাশ বলেন, ‘অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’