পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি উদ্বোধন হয়েছে ৪ বছর পার হয়েছে। ১ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ৩১০ টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনতলা এ ভবনটি এখনো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় নান্দনিক ভবনটি ক্রমেই জৌলুশ হারাচ্ছে। ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিচতলায় ও দ্বিতীয় তলায় যে দোকানগুলো করা হয়েছে সেগুলোও এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। শুধু বিশেষ দিবসে কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দেশের অন্য এলাকার মতো এ উপজেলায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের নির্বাচন না হওয়ায় কোনো কমিটি নেই। ফলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের দায়িত্বে রয়েছেন ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৪ সালে। তিন বছর পর পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও নয় বছর ধরে কোনো নির্বাচন হয় না। দীর্ঘদিন নির্বাচন বন্ধ থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা হতাশ। অপর দিকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটিও বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করতে পারছে না।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ সড়কের দক্ষিণ প্রান্তে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে এই মুক্তিযোদ্ধা ভবন কমপ্লেক্সের নির্মাণ শুরু হয়। নির্মাণ শেষে ২০১৯ সালে অক্টোবরে এ কমপ্লেক্সটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঈশ্বরদী কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। এ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনা সফরকালে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনসহ জেলার অনেকগুলো প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই ভবনটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ৩১০ টাকা ব্যয়ে কমপ্লেক্সটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভবনটি নির্মাণের জন্য এ সময় ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছিল ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ১০ শতক জমির ওপর নির্মিত চারতলা ভিত্তির তিনতলা কমপ্লেক্স ভবনের সম্মুখে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে দোকানঘর। তৃতীয় তলায় মুক্তিযোদ্ধাদের অফিস, হলরুম বা মিলনায়তন, টয়লেট, লাইব্রেরি ও মিউজিয়াম রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নান্দনিক নকশায় নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে প্রবেশের প্রধান ফটকে তালা দেওয়া। ভবনের বাইরের অংশে কিছু ময়লা জমে আছে। ভবনের সামনের অংশে রয়েছে একটি কারখানা যার কারণে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের সৌন্দর্য আড়াল পড়েছে।
বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের কার্যালয়টি মূলত শহরে স্টেশন রোডের থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। এখানেই মুক্তিযোদ্ধারা এসে সব সময় বসেন এবং বিভিন্ন আলোচনা করে থাকেন। বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার অভিমত, বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ভবনটি শহরের একপাশে হওয়ার কারণে অনেকেই সেখানে যেতে চান না। তবে কমপ্লেক্সের দোকানঘরগুলো সঠিকভাবে বরাদ্দ হলে ভবনটিতে হয়তো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসত।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘আমাদের তো নির্বাচিত কমিটি নেই। নির্বাচিত কমিটি থাকলে এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হতো। বর্তমানে সভাপতির দায়িত্বে আছেন ইউএনও। তিনি বিষয়গুলো দেখভাল করছেন।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা চান্না মন্ডল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বিশেষ উপহার। তাঁকে এ জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। ভবনটি বাণিজ্যিকভাবে চালু হলে মুক্তিযোদ্ধারা উপকৃত হবেন।
বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, সিঁড়ি বেয়ে এ কমপ্লেক্সের তিনতলা কক্ষে যেতে তাঁদের ভীষণ কষ্ট হয়। লিফটের ব্যবস্থা করলে তাঁরা সহজে যাতায়াত করতে পারেন।
ইউএনও সুবীর কুমার দাস বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটির দোকানঘরগুলো বাণিজ্যিকভাবে চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু যাঁদের জন্য নতুন ভবনটি করা হয়েছে, তাঁদের অনেকেই আসছেন না। মূলত ভবনটি শহর থেকে কিছুটা নির্জন স্থানে হওয়ায় অনেকেই এখানে আসতে চান না। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বয়সে প্রবীণ। তাঁরা শহরের অফিসে বসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাঁদের এমন সমস্যার কথা আমাকে বলেছেন। তবে চেষ্টা করছি, ভবনের দোকানঘরগুলো বাণিজ্যিকভাবে বরাদ্দের জন্য। ইতিমধ্যে সেগুলো বরাদ্দ নেওয়ার জন্য কেউ কেউ যোগাযোগ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’