রবিবার , ১১ জুন ২০২৩ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. নির্বাচন
  14. পাবনা
  15. ফিচার

ঈশ্বরদী
বিলুপ্তির পথে মালতো ভাষা

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
জুন ১১, ২০২৩ ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মাড়মী পল্লী এলাকা। যেখানে বসবাস মাল পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের পাঁচ শতাধিক মানুষের। এ সম্প্রদায়ের আরও কয়েক হাজার মানুষ বাস করে নাটোর, রাজশাহী ও নওগাঁ জেলায়।

বাঙালিদের সঙ্গে বাংলা ভাষায় কথা বললেও তাদের রয়েছে নিজস্ব ‘মালতো’ ভাষা। সবাই একসময় মালতো ভাষায় কথা বলত। ঘরে-বাইরে সবখানেই চলত এই ভাষা। নতুন প্রজন্ম এ ভাষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অনেকে জানেই না তাদের নিজস্ব একটি ভাষা রয়েছে। শিশুরা বাবা-মায়ের মুখে মালতো ভাষা শুনলেও তারা কথা বলতে পারে না এ ভাষায়। এ ভাষায় শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা না থাকার কারণেই মূলত মালতো ভাষা আজ বিলুপ্তির পথে।

মাড়মী পল্লীর ব্লকপ্রধান পিটার বিশ্বাস বলেন, ‘মালতো ভাষা লিখিতভাবে সংরক্ষিত না থাকায় আমরা প্রবীণরা বলতে পারলেও লিখতে জানি না। আমাদের নিজস্ব কোনো বর্ণমালা নেই। লেখার সব কাজ হয় বাংলায়। তাই তরুণ প্রজন্ম বাংলা ভাষায় পড়াশোনা করে চাকরি করছে। চর্চার অভাবে ধীরে ধীরে এ ভাষা একদিন হয়তো হারিয়ে যাবে।’

মাড়মী পল্লীর স্কুলপড়ুয়া সুব্রত ক্যালমেনের ভাষায়, ‘আমরা শুনেছি আমাদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। তবে পড়াশোনা সবই বাংলা ভাষায় করতে হচ্ছে। ফলে মালতো ভাষা শেখার প্রতি খুব বেশি আগ্রহ নেই। বাবা-মায়ের মুখে মালতো ভাষা শুনি। এ ভাষা খুব কঠিন। ভাষা কিছুটা বুঝলেও বলতে পারি না।’

ঈশ্বরদী সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সঞ্জীত দাস বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব এ ভাষা পড়া বা লেখার কোনো ব্যবস্থা নাই। একটি শিশুশিক্ষাকেন্দ্র থাকলেও তা নানা প্রতিবন্ধকতায় এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বাঙালি শিশুদের সঙ্গে একই স্কুলে পড়াশোনা ও খেলাধুলা করার কারণে আমরা ছোটবেলা থেকেই বাংলা ভাষা আয়ত্ত করে ফেলেছি। মালতো ভাষা নতুন প্রজন্মের শিশুরা বলতে পারে না। অনেক শিশু মালতো ভাষা শেখার আগ্রহ দেখায় না। এ ভাষা শেখার জন্য আমাদের পল্লীতে বর্তমানে কোনো লাইব্রেরি বা ভাষাশিক্ষার ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া এ ভাষায় রচিত কোনো বই এ পল্লীতে সংরক্ষিত নেই। তাই যত দিন যাচ্ছে ততই এ ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।’

এমনকি অনেকে জানিয়েছেন তারা যে মাল পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের মানুষ তা-ই তারা মাঝে মাঝে ভুলে যান। মাড়মী পল্লীর বাসিন্দা বার্নাট বিশ্বাস তেমনটিই বলেন।

তার ভাষায়, ‘আমরা মাল পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের মানুষ তা আমরা মাঝে মাঝে ভুলে যাই। আমাদের সংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান থাকলেও নেই নিজস্ব ভাষার ব্যবহার। একসময় আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষজন অশিক্ষিত ছিল। এখন অনেকেই পড়াশোনা শিখেছেন এবং নতুন প্রজন্মের সব শিশু পড়াশোনা করছে। তাই এখন তারা নিজের ভাষার চেয়ে প্রচলিত বাংলা ভাষাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা পারিবারিকভাবে চেষ্টা করছি নিজেদের ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একসময় তা পারব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনাগত প্রজন্ম হয়তো জানতেই পারবে না আমাদের নিজস্ব কোনো ভাষা ছিল।’

ইতিহাস ও ভাষা নিয়ে গবেষণা করেন অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাংলা ভাষাতেই নতুন প্রজন্মের মাড়মী পল্লীর শিশু-তরুণরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাল পাহাড়িদের ভাষা হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। পাশের দেশ ভারতে মালতো ভাষায় লিখিত বই ও তাদের ভাষাশিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের দেশে তা নেই। পরিবার থেকে বংশপরম্পরায় এ ভাষা শিখে থাকে শিশুরা। কিন্তু নতুন প্রজন্ম সেই ভাষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় হয়তো এসব ভাষার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।’

সরকারের তরফে এই ভাষা নিয়ে এখনও কোনো উদ্যোগ নেই। ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মালতো ভাষায় আলাদাভাবে লেখাপড়ার বিষয়ে স্থানীয় বা সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমি খোঁজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে দেখব তাদের জন্য মালতো ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যায় কি না।’

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

দুঃখিত,এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি করা নিষিদ্ধ