রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ক্রমেই অবনতি ঘটছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সোমবার রাত থেকে খালেদা জিয়া আরও দুর্বল হয়ে পড়ছেন। তার দেহে খনিজ অসমতা চরম আকার ধারণ করেছে। প্রধান ইলেকট্রোলাইট অর্থাৎ সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ক্লোরিন উপাদানের পরিমাণ কমে যাচ্ছে বলেই এই দুর্বলতা বাড়ছে। চিকিৎসকের ভাষায় ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। খনিজের ঘাটতি পূরণে রোজই ওষুধের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মাঝখানে এটার নিয়ন্ত্রণ অনেকটা সম্ভব হলেও সোমবার রাত থেকে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চেষ্টার অংশ হিসেবে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়ার এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা লিভারে। লিভারের অবস্থা ক্রমে খারাপ হচ্ছে। এখন এর চিকিৎসা করতে গেলে আর্থ্রাইটিস বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে নানা কারণে এর চিকিৎসার সুযোগ কম। উন্নত চিকিৎসার জন্য ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোর্টোসিস্টেমিক সান্ট (টিআইপিএস) করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে এ রোগের চিকিৎসা হয়ে থাকে।
লিভার সিরোসিস হলো, যকৃতের ক্রনিক রোগ, যাতে লিভারের সাধারণ আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। এতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। তবে তা কিন্তু এক দিনে হয় না। সাধারণত খাদ্যে অরুচি, ওজন হ্রাস, বমি ভাব বা বমি, বমি বা মলের সঙ্গে রক্তপাত, জ্বর জ্বর ভাব, শরীরে পানি আসা, খনিজে অসমতা ইত্যাদি হলো মূল উপসর্গ। গেল কয়েক দিন খালেদা জিয়ার বমির সঙ্গে রক্তপাত হচ্ছিল।
হাসপাতালে প্রয়োজনমাফিক তরল জাতীয় খাবার বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে আসছেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান সিঁথি। তিনি শাশুড়ির পাশে সার্বক্ষণিক থাকছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসও হাসপাতালে যাচ্ছেন।
খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা দিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি- এলডিপি: ২০ দলীয় জোট শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি নেতারা জানিয়েছেন, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায়, বাংলাদেশের বিরোধের রাজনীতি দীর্ঘস্থায়িত্ব পাবে। কিন্তু এই বিরোধ স্থায়ী করবেন না। এর বিরূপ প্রভাব থেকে আওয়ামী লীগ রক্ষা পাবে না।
মঙ্গলবার এলডিপি সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম এক বিবৃতিতে বলেছেন, পৃথিবীতে বহু শাসক এসেছে, বহু স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ শান্তিতে বিশ্বাসী। কিন্তু খালেদা জিয়ার কিছু হয়ে গেলে সেই দায় ক্ষমতাসীন হিসেবে আওয়ামী লীগ এড়াতে পারবে না। এর রেশ যাবে বহুদূর।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি: বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বিবৃতিতে বলেছেন, সংকটাপন্ন খালেদা জিয়ার বিদেশে উপযুক্ত চিকিৎসায় বাধা প্রদান করে সরকার দেশকে চরম বিভাজন, হিংসা আর সহিংসতার পথে ঠেলে দিচ্ছে।
সোমবার বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কোনো উস্কানি ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে হামলা-আক্রমণ করেছে, নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করেছে, আহত করেছে, তা সরকারের চরম অসহিষুষ্ণ ও নিপীড়নমূলক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।