পাবনার ঈশ্বরদীতে ৩১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্লাস বাদ দিয়ে তিন দিনব্যাপী ‘কারিকুলাম বিস্তরণ রূপরেখা ২০২১ পেশাগত মান উন্নয়ন’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ঈশ্বরদী উপজেলা শাখার নিজস্ব কার্যালয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অংশগ্রহণে এ কর্মশালার উদ্বোধন করা হয়।
চলতি মাসেই সরকারি উদ্যোগে ৫ দিনব্যাপী এ ধরণের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হলেও নতুন করে আবারও কর্মশালার আয়োজনকে শিক্ষকরা অনেকেই বাড়াবাড়ি বলে মনে করছেন। ক্লাস বাদ দিয়ে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষক ও আয়োজকদের নিয়ে ইতিমধ্যে উপজেলার সর্বত্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে কর্মশালা করতে পারেন। কিন্তু বাইরে এভাবে কর্মশালার আয়োজন করতে পারেন না জানান উপজেলা শিক্ষা অফিস। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অনুষ্ঠিত কর্মশালা বন্ধ করার জন্য ইতিমধ্যেই শিক্ষা অফিস থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ঈশ্বরদী উপজেলা শাখার সভাপতি ফজলুল হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেনের সঞ্চালনায় মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েস।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম, মাষ্টার ট্রেনার ও রিয়াজ উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, মাষ্টার ট্রেইনার ও সাহাপুর আবুল কাশেম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুলতানা রাজিয়াসহ সমিতির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক শিক্ষক সমিতির এই কর্মশালার আয়োজনকে বাড়াবাড়ি বলে মনে করছেন। চলতি মাসেই সরকারি উদ্যোগে ৫ দিনব্যাপী এ ধরণের ট্রেনিং অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি। ইনহাউজে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হতে পারে না বলে তিনি জানিয়েছেন।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম বলেন, কর্মশালায় আমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত ছিলাম। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কর্মশালার বিষয়ে অনুমতি দিয়েছে কি না আমার সঠিক জানা নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেলিম আক্তার জানান, এ ধরনের কর্মশালার আয়োজন অনিয়মতান্ত্রিক। ইন হাউজে মাষ্টার ট্রেইনার গিয়ে শিক্ষকদের ট্রেনিং দিবে। ক্লাস বাদ দিয়ে সমিতি অফিসে ট্রেনিং গ্রহণের বিষয়টি জানার পর বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি।
পাবনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রুস্তম আলী হেলালী জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত ছাড়া ক্লাস বাদ দিয়ে কোনো সংগঠনের কর্মশালায় শিক্ষকদের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। তবে ছুটির দিনে তারা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। কেনো ‘ওয়ার্কিং ডে’-তে এমন আয়োজন করা হলো সে বিষয়ে তদন্ত করা হবে। সত্যতা পেলে আয়োজকসহ অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আয়োজক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফজলুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যে ট্রেনিং হলো এরই ভিত্তিতে আমরা শিক্ষকদের রিফ্রেসমেন্ট বা মতবিনিময়ের জন্য এ কর্মশালার আয়োজন করেছি। ইনহাউজে যেন শিক্ষকদের আরও ট্রেন্ডআপ করার জন্য ঝালাই করা হচ্ছে। তিন ঘন্টা করে কর্মশালা হচ্ছে। ক্লাস বাদ দিয়ে সমিতি অফিসে এ ধরনের কর্মশালা অনুষ্ঠানের অনুমতি প্রসঙ্গে সরকারি নির্দেশনা বা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের অনুমতি নাই জানিয়ে তিনি বলেন, ইনহাউজ ট্রেইনার হিসাবে আমরা ইউএনওর সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তিনি বলেছেন ভালো উদ্যোগ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবেও উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিএ ইমরুল কায়েস জানান, পার্টিকুলার সব স্কুল বন্ধ করে কর্মশালা হয়নি। নতুন কারিকুলামে সংশ্লিষ্ঠ যে পাঠ পরিক্রম বিশেষ করে ‘বাংলা’ আজ উদ্বোধন করা হয়েছে। আগামীকাল (বুধবার) থেকে অফিস আওয়ারের পর কর্মশালা হবে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া প্রথম ধাপের এ কর্মশালা আগামী ২৫ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১.৩০ মিনিট ও ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তিন দিনের এ কর্মশালায় মোট ৪ বিষয়ে সমিতির অন্তর্ভুক্ত ৩১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ১২৪ জন শিক্ষক অংশগ্রহণ করার কথা। কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য সমিতি প্রতিদিন তাদের ২০০ টাকা হারে সম্মানী প্রদান করবে বলে জানা গেছে।