সোমবার , ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. নির্বাচন
  14. পাবনা
  15. ফিচার

ঈশ্বরদীতে এখনো রাষ্ট্রভাষা বিরোধীর নামে বিদ্যালয়

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
ডিসেম্বর ১৯, ২০২২ ৮:১৫ অপরাহ্ণ
ঈশ্বরদীতে এখনো রাষ্ট্রভাষা বিরোধীর নামে বিদ্যালয়

বিজয়ের ৫১ বছরেও পরিবর্তন করা হয়নি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম। ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের আওতাধীন হলেও রেলওয়ে মন্ত্রণালয় পরিচালিত। ঈশ্বরদী পৌর এলাকার বিহারি অধ্যুষিত ফতেহ মোহাম্মদপুর মহল্লায় উঁচু দেয়ালে ঘেরা বিদ্যালয়টির প্রধান ফটকেই বড় সাইনবোর্ডে লেখা ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়’। একাধিক গণমাধ্যমে বিষয়টি উঠে আসার পর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনের নামানুসারের এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। তবে ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে নামটি পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঈশ্বরদীতে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ছেলেমেয়েরাই শুধু এ বিদ্যালয়টিতে পড়ালেখা করত। ঈশ্বরদী পৌর এলাকার বিহারি অধ্যুষিত বিহারিপাড়া ও ফতেহ মোহাম্মদপুর এলাকায় বসবাসকারী বিহারিদের সন্তানদের পাশাপাশি এখানে কিছু বাঙালি ছেলেমেয়েও ভর্তি হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে বিহারি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি।

এদিকে, এ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার দাবিতে ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে স্কুলের প্রধান ফটক থেকে ‘নাজিম উদ্দিন’ নামটি কালো কালি দিয়ে মুছে দেয়। ছাত্রলীগের এ উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও কাজের কাজ হয়নি এখনো। বছরের পর বছর নামটি পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেও নামটি পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি। এতে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ওই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষরা। তাদের দাবি, দ্রুত নামটি পরিবর্তন করা হোক।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন দাস বলেন, ‘আমরা বহু মিটিং-মিছিল, আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, কিন্তু বিদ্যালয়ের নামটি পরিবর্তন করতে পারিনি। কেন এবং কী কারণে নামটি পরিবর্তন হচ্ছে না, তা আমাদের জানা নেই। আমরা চাই এ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হোক। আমরা বিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা বাংলার বিরোধিতাকারীর নামটি উচ্চারণ করতে চাই না।’

সাবেক ভিপি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মুরাদ মালিথা বলেন, ‘দেশের জন্য, মাটির জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের কারও নামে যদি এ বিদ্যালয়টি নাম হতো, তাহলে শান্তি পেতাম। খাজা নাজিমউদ্দিনের নামে বিদ্যালয়টির নাম নিতে ঘৃণা হয়। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনো শক্তির নামে অথবা স্থানীয় প্রসিদ্ধ কোনো স্থানের নামে বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হোক। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

ঈশ্বরদী নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ কিরণ বলেন, ‘ঈশ্বরদী নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে এ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনো নাম পরিবর্তন করা হয়নি।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফান্টু বলেন, ‘এর আগে জিন্না কলেজের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। অথচ খাজা নাজিমউদ্দিনের নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটির নাম এখনো রয়ে গেছে, যা ঈশ্বরদীবাসীর জন্য খুবই অসম্মানজনক।’

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক খন্দকার আব্দুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তনে চেষ্টা করে আসছি। মন্ত্রণালয়ে অনেক ঘুরেও এখন পর্যন্ত আশার আলো দেখতে পারিনি। আমি মনে করি, প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা অপশক্তির কারণে আমাদের এ বিদ্যালয় থেকে খাজা নাজিমউদ্দিনের নামটি সরিয়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। আমি আশা করব সরকার যেন এ বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করে আমাদের অভিশাপ ও দায়মুক্ত করে। এটি আমাদের এলাকার দাবি, ঈশ্বরদীবাসীর দাবি।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সূফী নূর মোহম্মদ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ বিষয়ে জানতে পেরে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান রেখে বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’

ঈশ্বরদীর ইউএনও পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ের নাম পাল্টানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সুপারিশপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’

পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার জন্য আমি এ এলাকার এমপি হিসেবে রেলমন্ত্রীকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুললে এর প্রবল বিরোধিতা করেন পূর্ব বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন। সে বছরের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ তার সে ঘোষণায় বাঙালি ছাত্রসমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে এ আন্দোলনের মধ্যেই ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন এক ভাষণে জিন্নাহর কথারই পুনরুক্তি করেন। তার এ বক্তব্যে ছাত্রদের আন্দোলনে আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো অবস্থা হয়। এরপর সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সভা-সমাবেশের ডাক দেয়। প্রশাসন ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে।।১৪৪ ধারা ভেঙেই ছাত্রজনতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিলিত হতে থাকলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, শফিউরসহ অনেকে নিহত হন। মূলত খাজা নাজিমউদ্দিনের নির্দেশেই পুলিশ এ হত্যাযজ্ঞ চালায় বলে ধারণা করা হয়। আর তাই খাজা নাজিমউদ্দিনের নামে বিদ্যালয়ের নাম থাকায় ক্ষোভ জমেছে ঈশ্বরদীবাসীর মধ্যে।

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

দুঃখিত,এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি করা নিষিদ্ধ