এক লাখ কোটি টাকার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের ১২শ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটের নির্মাণকাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে এই ইউনিটটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার কথা। ১২শ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিটটির নির্মাণকাজ ২০২৫ সালে শেষ হবে। তবে এসব কাজ এগিয়ে চললেও বিদ্যুৎ নেওয়ার জন্য পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ পিছিয়ে রয়েছে। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, কেন্দ্র প্রস্তুত থাকলেও সঞ্চালন লাইনের কারণে সময়মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু নাও হতে পারে।
আট ভাগে নির্মাণাধীন সঞ্চালন প্রকল্পের একটি অংশের নির্মাণকাজের অগ্রগতি মাত্র ২ শতাংশ। ভারত থেকে ঋণের অর্থ ছাড় ও ঠিকাদার নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় সঞ্চালন লাইন নির্মাণে দেরি হচ্ছে বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে পিজিসিবি।
সঞ্চালন লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে ২০২০ সালেই নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাচালিত পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনও পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না। সক্ষমতা অনুসারে বিদ্যুৎ না পেলেও চুক্তির শর্ত অনুসারে গত দুই বছরে ৪ হাজার কোটি টাকা শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে। জরিমানা গুনছে পিজিসিবিও। রূপপুরেও এমনটি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্নিষ্টদের।
সঞ্চালন লাইন নির্মাণ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বৈঠক বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেছেন, সময়মতোই এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যারা বিদ্যুৎ কিনবে, বিদ্যুৎ সঞ্চালন করবে, তাদের প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। পিজিসিবি জানিয়েছে, তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, কভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে কাজ পিছিয়েছে। কাজ চলছে, খুব একটা বিলম্ব হবে না।
রূপপুরের অগ্রগতি :রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান রসাটমের সার্বিক সহযোগিতায় দেশটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ রাশিয়ার ঋণ। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর প্রথম ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মাসে দ্বিতীয় ইউনিটের রি-অ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই ইউনিটের অবকাঠামোর অগ্রগতি ৫৩ শতাংশের বেশি।
সঞ্চালন লাইন নির্মাণ :ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) অর্থে এই সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ চলছে। পিজিসিবির প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি অনুমোদন দেয়। মোট ১০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকার মধ্যে ৮ হাজার ২১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অর্থায়নের বিষয়ে ভারত সরকারের নীতিগত অনুমোদন পাওয়া যায় ২০১৯ সালের ২৬ মে। এ ছাড়া ভারতের এক্সিম ব্যাংক ঠিকাদার ও দরপত্রের দলিল চূড়ান্ত করতে ২৪০ দিন সময়ক্ষেপণ করেছে। করোনার কারণেও দেরি হয়েছে। ৮ প্যাকেজে বিভক্ত এই প্রকল্পের রূপপুর-বাঘাবাড়ী ২৩০ কেভির ৬৫ কিলোমিটার লাইনের নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। আমিনবাজার-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভির ৫১ কিলোমিটার লাইনের নির্মাণ অগ্রগতি প্রায় ৮২ শতাংশ। আমিনবাজার-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভির ১৪৭ কিলোমিটার লাইনের নির্মাণ অগ্রগতি প্রায় ৪৬ শতাংশ। রূপপুর-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভির ১৪৪ কিলোমিটারের অগ্রগতি ৫১ শতাংশ। ৯টি বে এক্সটেনশন নির্মাণকাজের অগ্রগতি ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। যমুনা ও পদ্মা নদী পারাপার অংশের অগ্রগতি সবচেয়ে কম, ২ শতাংশ।
জানতে চাইলে পিজিসিবির রূপপুর সঞ্চালন লাইনের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁরা সময়মতো কাজ সম্পাদনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। রিভার ক্রসিংয়ের কাজটাই পিছিয়ে আছে। তবে ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।