বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএসআরআই) মহাপরিচালক ড. আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। বিজ্ঞানী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নানাভাবে হয়রানি করছেন তিনি। প্রায় এক যুগধরে ওই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের পদোন্নতি বন্ধ করে রেখেছন তিনি। এমন অভিযোগে মুখ খুলছেন অনেকেই।
ড. আমজাদ হোসেন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রকল্পে পরিচালক নিয়োগ থেকে শুরু করে সকল নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম করেছেন। নিজের ইচ্ছেমত প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে গবেষণার সময় বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রকল্পের দায়িত্ব। ফলে চিনি ও গুড় উৎপাদনে সঠিক ভুমিকা রাখতে পারবে না বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএসআরআইএর আওতাধীন পাবর্ত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য পাইলট প্রকল্পে বিশাল অংঙ্কের টাকা বরাদ্দ রয়েছে। টাকা হাতিয়ে নিতে সেই প্রকল্পের পরিচালক মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন নিজেই। এছাড়াও সমন্বিত গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্প, সাথী ফসল প্রকল্প, পরিচ্ছন্ন বীজ বিতরণ প্রকল্প এবং মধু প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এছাড়াও ২০২১-২২ অর্থবছরে সাথী ফসল গবেষণা কর্মসূচির প্রতিটি প্লটে কৃষকদের ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও মাত্র ১০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
এছাড়াও প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ না নিয়ে প্রশিক্ষণ ভাতা ও টিএডিএ নেওয়ার মত ঘটনাও ঘটছে। কোনো নিয়মনীতি না মানায় প্রতিষ্ঠানটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সালের পর থেকে এ প্রতিষ্ঠানে চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার (সিএসও) পদের ১৬ জন বিজ্ঞানীকে প্রাপ্য পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। ফলে তাদের পদ এখনও শূণ্য। তিনজন সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার (এসএসও) এবং দুটি প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার (পিএসও) পদ ১১ বছর ধরে খালি। বিজ্ঞানীরা বলছেন একটি মামলার অজুহাতে প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব ধরণের কার্যক্রম হুমকিতে পড়েছে।
পদের জ্যেষ্ঠতা পেতে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত বিজ্ঞানী আতাউর রহমান, গাজী আকরাম হোসেন ও আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিএসআরআই’র মহাপরিচালককে আসামি করে ২০১১ সালে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। তারপর থেকে জাতীয় প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি ৪০ জন বিজ্ঞানীকে নিয়ে অভ্যন্তরীণ ওয়ার্কশপের একটি বৈঠক শুরু হলে মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে প্রমোশন চাই বলে শ্লোগান দিতে থাকেন তারা।
বিজ্ঞানী গাজী আকরাম বলেন, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘শুধু পদোন্নতি আটকে থাকার কারণেই গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ঠিকমত কাজ করতে পারছে না।
রঞ্জিত চন্দ্র কবিরাজসহ আরও কয়েকজন বিজ্ঞানী একই মত দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা লঙ্ঘন করে সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রনালয়ের ২৬ জনের একটি চিঠি পাঠান বিএসআরআই’র মহাপরিচালক ড. আমজাদ হোসেন। এ তালিকা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
বিএসআরআই’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কমকর্তা ড. কুয়াশা মাহমুদ বলেন, ২০১৫ সালে তার সিএসও পদে পদোন্নতি হওয়ার কথা। কিন্তু মামলার কারণে এখনও তা হয়নি। একই অভিযোগ করেন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা নাদিরা ইসলাম।
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ‘মামলার অজুহাতে বিজ্ঞানীদের পদোন্নতি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে বিজ্ঞানীদের।
তবে গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কথা অস্বীকার করে মহাপরিচালক ড. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘গবেষণা কার্যক্রম যথানিয়মেই চলছে। এরই মধ্যে ২৬ জনের তালিকা পদোন্নতির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে’।