উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় চালের মোকাম পাবনার ঈশ্বরদীতে অস্বাভাবিকভাবে চালের দাম বেড়েছে। চার দিনের ব্যবধানে মোটা ও চিকন চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজির বস্তা) ২০০ থেকে ২৫০ টাকা এবং খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাল ৫ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ বাড়ার পর মোকামের হাটবাজারেও ধানের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে মোকাম থেকে ধান পরিবহনের খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে চালের দাম আরও বাড়তে পারে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত সোমবার থেকে ঈশ্বরদীর জয়নগর মোকামের পাইকারি বাজারে মিনিকেট চালের দাম ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা বস্তা (৫০ কেজি)। গতকাল শুক্রবার সকালে তা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ টাকায়। একইভাবে বাসমতী চাল ৩ হাজার ৪০০ থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়, বি-আর ২৮ চাল ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ এবং বি-আর-২৯ চাল ২ হাজার ৫৫০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
একইভাবে স্থানীয় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৬০ থেকে ৬৪, বাসমতী ৭২ থেকে ৭৪, বিআর-২৮ চাল ৫২ থেকে ৫৫, বিআর-২৯ চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল ঈশ্বরদী বাজারের ৫টি খুচরা দোকানে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঈশ্বরদী শহরের পুরাতন বাজারের ব্যবসায়ী মসলেম উদ্দিন বলেন, শোনা যাচ্ছে, মোকামে নাকি ধানও পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে আবার তেলের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে চালের দাম বাড়ছেই। চার দিনে প্রতি কেজি চাল ৪-৫ টাকা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, বেচাকেনায়ও তেমন লাভ নেই।
এখন চালের দোকান খুলে রাখার চেয়ে বন্ধ রাখা ভালো। এতে লোকসান কম হবে।
ব্যবসায়ী এনামুল ইসলাম দুলাল বলেন, প্রতিদিনই চালের দাম বাড়ছে। দেশে ধান-চালের কোনো সংকট নেই। একশ্রেণির মুনাফালোভী ও মজুতদার ধান-চাল মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। তাদের কারণে চালের দাম বেড়েছে।
উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি জুলমত হায়দার বলেন, ঈশ্বরদীর মোকামে বেশ কয়েক দিন ধরে চালের দাম বেড়েই চলছে। মোকামের হাটবাজারে প্রয়োজনের তুলনায় ধান কম পাওয়া যাচ্ছে। ধানের দামও বেশি। এ ছাড়া তেলের দাম বাড়ায় মিলের উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। ফলে পাইকারি বাজারেও চালের দাম বাড়ছে।
ঈশ্বরদী উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় চালের মোকাম। এখানে বর্তমানে চাতাল-মিলসহ চার শতাধিক চালকল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ চালকলের সংখ্যা ৩৩০। অটো রাইস মিল রয়েছে ১৭টি। প্রতিটি চাতাল ও অটো রাইস মিলে প্রতিদিন ৩ থেকে ৭ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়। পাবনা জেলার কয়েকটি থানাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, নাটোর, গাইবান্ধা, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দক্ষিণাঞ্চলের মাদারীপুর, ভোলা, পটুয়াখালী এবং পূর্বাঞ্চলের হবিগঞ্জের বিভিন্ন মোকাম থেকে ব্যবসায়ীরা ধান কিনে ঈশ্বরদীর মিল-চাতালে এনে চাল উৎপাদন করে থাকেন। এরপর উৎপাদিত চাল রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাইকারি বিক্রি করা হয়।