ভালো দাম না থাকায় গরুকে ঢেঁড়শ খাওয়ানো হচ্ছে
ভালো দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ঈশ্বরদীর ঢেঁড়শ চাষিরা। দেশের অন্যতম ঢেঁড়শ উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত ঈশ্বরদীতে মুলাডুলি ও আবেদ মোড়ে ঢেঁড়শের বিশাল পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে।
প্রতিদিন পাইকারি আড়ত থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ৬০ থেকে ৭০ ট্রাক ঢেঁড়শ রাজধানী ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকাতে পাঠায়। এবার ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে ঢেঁড়শের ভালো ফলন হয়েছে।
দেশের জেলা শহরের সবজি বাজারে ঢেঁড়শের দাম বেশি থাকলেও এখানকার পাইকারি বাজারে ঢেঁড়শ পাইকারি প্রতি কেজি ৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঈশ্বরদীর ঢেঁড়শ চাষি বিল্লালের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আজহার দশদিন আগে থেকে ঈদ পরবর্তী ১৫দিন যাবত ঈশ্বরদীর পাইকারি সবজি আড়ত মুলাডুলি ও আবেদ মোড়ে ঢেঁড়শ বিক্রি করতে হচ্ছে তিন টাকা কেজি দরে। অথচ ক্ষেত থেকে প্রতি কেজি ঢেঁড়শ উঠাতে শ্রমিককে দিতে হচ্ছে ৪ টাকা।
এছাড়াও সবজি আড়তে ঢেঁড়শ বিক্রি করতে পরিবহন ভাড়া গুণতে হচ্ছে স্থান ভেদে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। এতে ঢেঁড়শ চাষিরা লোকশান গুনতে গুনতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেক চাষি ঢেঁড়শ ক্ষেত থেকে উঠিয়ে ক্ষেতের আইলে ফেলে দিচ্ছেন। গরুকে খাওয়ানোর গো-খামারিদের নিকট ৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলির চাষি শিপন জানান, তিনি এবার তিন বিঘা জমিতে ঢেঁড়শের আবাদ করেছেন। ঢেড়স এমন একটি সবজি, গাছ থেকে একদিন না উঠালেই শক্ত হয়ে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায় এবং গাছ নষ্ঠ হয়ে যায়। গাছ টিকিয়ে রাখার জন্যই এক দিন পর পর ঢেঁড়শ উঠাতে হয়। উঠানো এই ঢেঁড়শ ক্ষেতেই ফেলে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার গরুর খামারিদের নিকট গো-খাদ্য হিসেবে পানির দরে বিক্রি করতে চাইলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
সোমবার সরেজমিনে ঈশ্বরদী উপজেলার রাজাপুর, মুলাডুলি, পতিরাজপুর, শেখপাড়া, নিকরহাটা, বেতবাড়িয়া, আটঘরিয়া, দাশুড়িয়া, আড়ামবাড়িয়া, নতুনহাট, ভাড়ইমারি, গোপালপুর, পাকশী ও আওতাপাড়ার ঢেঁড়শ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক বিঘা জমিতে ঢ্যাঁড়স আবাদে বীজ, লাঙ্গল ও শ্রমিকসহ খরচ হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় নিচু এলাকায় ঢেঁড়শ নস্ট হয়নি। ফলে পাইকারি বাজারে আমদানি বেশি হওয়ায় ঢেঁড়শ ভালো দামে বিক্রি করতে না পারায় তাদের লোকশান গুনতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদী উপজেলায় ৩ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫০ হেক্টর জমিতে ঢেঁড়শের আবাদ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, রাজধানীসহ দেশের অনেক জেলার বাজারে ঈশ্বরদী থেকে ট্রাকে করে ঢেঁড়শ পাঠানো হয়। অন্যান্য সবজির তুলনায় এবার ঢেঁড়শের ভালো ফলন হওয়ায় আমদানি বেশি হচ্ছে। তাই স্থানীয় বাজারে দাম কমে গেছে।