বাজারে পর্যাপ্ত গরু। ছোট ও মাঝারি আর বড় সাইজের। ক্রেতার নজর বেশি ছোট আর মাঝারি সাইজের গরুর প্রতি। বড় গরুর প্রতি খুব একটা আগ্রহ নেই কারো। কারণ হিসেবে ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য যে কোনো বছরের তুলনায় বেপারিরা এবার গরুর দাম হাঁকছেন অনেক বেশি। আর বেপারিরা বলছেন, গরু লালন-পালনসহ পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় দাম বেশি চাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। কম দামেও বিক্রি করা যাবে না। গত বছর যে গরু ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এ বছর তা ৭০ এর নিচে বিক্রি করা যাবে না। ক্রেতা-বিক্রেতার এই দাম দোলাচলের ফলে গতকাল পর্যন্ত বিক্রিও খুব একটা জমে উঠেনি। তবে কিছু গরু বিক্রি হয়েছে। হাসিল আদায়কারীরা বলছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যে গরু বিক্রি হয়েছে, তা আসলে পর্যাপ্ত নয়। আজ শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হবে বলেও আশার কথা জানান হাট কর্তৃপক্ষ। যা চলবে ঈদের আগের গভীর রাত পর্যন্ত।
এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ১০টি আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ৭টি মোট ১৭টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। আর গাবতলী ও সারুলিয়ার স্থায়ী দুটি হাট তো আছেই। প্রতিটি হাটেই পর্যাপ্ত গরু উঠেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব গরু আনা হয়েছে। গতকালও ট্রাকে করে অনেক গরু ঢাকায় ঢুকেছে। ঢাকার পথে আসছে আরো অসংখ্য গরুর ট্রাক। আজ এবং আগামীকাল হাট জমে উঠবে।
রাজধানীর রামপুরার বাসিন্দা শওকত আলী আফতাবনগর হাট থেকে ৮৫ হাজার টাকায় একটি মাঝারি সাইজের গরু কিনেছেন। এই দামে তিনি ঠকেছেন নাকি জিতেছিন- তা জানতে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করছেন, ভাই দামটা কি ঠিক আছে? তার মতোই মালিবাগের বাসিন্দা বিল্লাল গরু কিনেছেন ৬৬ হাজার টাকায়।
রাজধানীর মেরাদিয়া হাটে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে ৯টি গরু নিয়ে এসেছেন মাহে আলম। তিনি জানান, ক্রেতারা আসেন দরদাম করেন। কিন্তু গরু কিনছেন না। আজ শুক্রবার থেকে গরু বেচা-বিক্রি জমে ওঠবে। হাটের আরেক বেপারি আশিক সরকার বলেন, হাটে এবার মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি। মানুষ সীমিত বাজেটে গরু কিনতে আগ্রহী। তাই আমি ৬টা মাঝারি সাইজের গরু এনেছি। আজকে বিক্রি হলে রাতে আরো ৮টি গরু নিয়ে আসব।
ধোলাইখালের হাটে গিয়ে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পর পর বিভিন্ন জেলা থেকে আসছে গরুবাহী ট্রাক। গরু দেখতে ভিড় করছেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। মাঝারি সাইজের গরুর দাম বিক্রেতারা চাইছেন এক লাখের বেশি। তার থেকে একটু ছোট গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। বিক্রেতাদের অভিযোগ, ক্রেতারা দাম করছেন খুবই কম। গত বছর যে দামে গরু কিনেছেন, এ বছরও সেই দামই বলছেন। আর ক্রেতাদের বক্তব্য- গরুর তুলনায় বেশি দাম চাইছেন বেপারিরা। প্রতিটি গরুতে অন্তত ২০ হাজার টাকা বেশি চাইছেন তারা।
এদিকে গরু ছাড়াও হাটে আছে বিভিন্ন ছাগল ও ভেড়া। বাজারে যে দামে ছাগলের মাংস পাওয়া যায় সেই দামই হাঁকছেন বিক্রেতারা। রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন শাহজাহানপুর হাটে ঝিনাইদহ থেকে ১২টা ছোট গরু এনেছেন নূর মোহাম্মদ। প্রতিটি গরুর ওজন ৮০ থেকে ১০০ কেজির মতো। সব গরু তার নিজের খামারের। তিনি বলেন, ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম চেয়েছি। সবাই গত বছরের দাম মানে ৪৫-৫০ হাজার টাকা বলছে। তবে ওই দামে এবার গরু দেয়া সম্ভব নয়। এবার ৬০ হাজার টাকার নিচে হবে না। আমাদের কেনা বাড়তি দামে, পশু খাদ্যের দামও চড়া।
কুষ্টিয়া থেকে ১০টি গরু নিয়ে কমলাপুর হাটে এসেছেন আবু তাহের। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে ট্রাকে করে গরু এনেছি। ছোট আর মাঝারি দুই সাইজের গরুই আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্রেতা খুব একটা আসেনি। যারা এসেছেন, দরদাম করে চলে যাচ্ছেন। একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি। তবে শুক্র ও শনিবার সব গরুই বিক্রি হবে বলে তার আশা।
এদিকে গাবতলী বাজার সূত্রে জানা গেছে, বাজারে বেপারি ও গবাদিপশুর নিরাপত্তা এবং ক্রেতাদের সুবিধার জন্য ৭০০ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছে। প্রতিটি পয়েন্টে রয়েছে হাসিল ঘর। নগদে টাকা পরিশোধের পাশাপাশি বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমেও দেয়া যাবে।
এদিকে বাজারের নিরাপত্তায় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল দুপুরে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান খন্দকার কমান্ডার আল মঈন বাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে পশুর হাটকেন্দ্রিক এবং মানুষের বাড়ি ফেরা নির্বিঘ করতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান। সেই সঙ্গে হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানতে মাস্কও বিতরণ করা হয় র্যাবের পক্ষে।
পশুর হাটে ২২টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম : এদিকে ঢাকার পশুর হাটগুলোতে ভেটেরিনারি মেডিকেল সেবা দিতে গতকাল থেকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ২২টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম নামিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি অনুমোদিত পশুর হাটে এ টিমগুলো কাজ শুরু করেছে। রোগাক্রান্ত ও কুরবানির অনুপযুক্ত গবাদিপশু যাতে হাটে ক্রয়-বিক্রয় না হয় সেজন্য এ মেডিকেল টিম কাজ করছে। এছাড়াও সারাদেশের কুরবানির হাটে ১৭৩৯টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে। একই সঙ্গে ১টি বিশেষজ্ঞ ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমও কাজ করছে।
এছাড়া পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম তদারকি করবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এজন্য মন্ত্রণালয়ের ৯ জন উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে নির্ধারিত পশুর হাটে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ১২টি মনিটরিং টিম হাট তদারকি করবে।