ঈশ্বরদীতে বিএনপির এক কর্মীকে কুপিয়ে জখমের জেরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অন্তত ৩৫ বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মূলত বিগত দিনে নির্বাচনী বিরোধ ও জমি দখলকে কেন্দ্র করে তরিকুল ইসলাম শেখ (২৬) নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গেলেও সশস্ত্র লোকজনের বাধার মুখে নিরাপত্তাজনিত কারণে আগুন না নিভিয়েই নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করেন। পরে পাবনা র্যাব-১২ এর সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণসহ পরিস্থিতি শান্ত করেন।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পাবনা ঈশ্বরদীর কামালপুর ও সাহাপুরের চরগড়গড়ি নামক পৃথক স্থানে এসব ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী তরিকুল শেখ তালবাড়ির চরে গেলে আওয়ামী লীগের লোকজন তাকে কুপিয়ে জখম করে। পরে তাকে উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত তরিকুল তার ওপর হামলাকারীদের নাম প্রকাশ করে। এরপরই তরিকুলের স্বজনরা ও দলীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামী লীগের সেসব নেতাকর্মীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।
বর্তমানে তরিকুল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান ওই এলাকার বিএনপি নেতা সাইদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, চরের জমি দেখতে গেলে আওয়ামী লীগ নেতা তরিকুল ইসলাম মেম্বারের হুকুমে তার পক্ষের লোকজন আসাদুল মেম্বার, আলামিন, আকুব্বার, শফি, আশিক, নাজিমসহ অন্যরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তরিকুলের পায়ের রগ ও হাঁটু কেটে ফেলে।
তিনি আরও বলেন, তারা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে এলাকা থেকে অনেক মানুষকে বিতাড়িত করেছে। বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট করেছে। ৫ আগস্ট পতনের পর তারা আত্মগোপনে থেকে মাঝেমধ্যেই বিএনপির লোকজন এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগ নেতা তরিকুল ইসলাম মেম্বার অভিযোগ অস্বীকার বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে আমরা গৃহবন্দি হয়ে পড়েছি। নিজেদের ও সরকার থেকে লিজ নেওয়া চরের জমি ছেড়ে এসেছি। এই জমি এখন বিএনপি নেতা সাইদুল ইসলাম প্রামানিক ও কুষ্টিয়ার হরিশপুরের মুকুল গ্রুপ দখল করে নিয়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছে।’
এ বিরোধের জেরে মুকুল গ্রুপই স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা তরিকুল ইসলামকে কুপিয়ে জখম করেছে বলে দাবি করেছেন তরিকুল মেম্বার।
তিনি আরও বলেন, ‘সেই দায় আমাদের ওপর দিয়ে অন্তত ৩৫ বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে। এখন শীতের দিনে আমরা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।’
ঈশ্বরদী থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় নিরাপত্তাজনিত কারণে ফিরে আসতে হয়। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেনা ও র্যাব সদস্যরা এলাকায় টহলে রয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।