পাবনার ঈশ্বরদীতে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল ও ফুয়েল পরিবহনের জন্য ৩৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত হয়েছে রুপপুর রেলওয়ে স্টেশন। স্টেশনটি ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি অতিথিরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। তবে উদ্বোধনের দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এক ছটাক পন্যও পরিবাহিত হতে দেখা যায়নি ঈশ্বরদী-রুপপুরের এই রেলপথটিতে। বিপুল পরিমান অর্থ ব্যায় করে নির্মিত এই স্টেশনটি কেবল রেলের “ওয়াগন ইয়ার্ড” ও মালপত্র রাখার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে স্টেশনটি আদৌ কোন কাজে আসবে কিনা এ নিয়ে নানা সংশয় রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে রেল কর্তৃপক্ষ। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চলে স্টেশনটি নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। প্রকল্পের আওতায় ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন হতে ঈশ্বরদী হয়ে রূপপুর পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার রেলপথ ও রূপপুর নামে একটি স্টেশন নির্মাণ করা হয়। এরমধ্যে ১৩টি লেভেল ক্রসিং, ৭টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কম্পিউটার বেইজ, কালার লাইট ও সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উদ্বোধনের সময় বলেছিলেন, রূপপুর স্টেশন থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে না। এটি শুধু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালপত্র ও ভারী যন্ত্রপাতি আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি ঈশ্বরদী ইপিজেড এর মালামালও এই স্টেশন থেকে পরিবহণ করা হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সকল ভারী যন্ত্রপাতি নদী ও সড়কপথেই রূপপুর প্রকল্পে আনা হচ্ছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাকশীর পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে এবং রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পাশেই আধুনিক আঙ্গিকের রূপপুর স্টেশনটি জনশূন্য। রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। প্লাটফর্ম এলাকায় যত্রতত্র ময়লা পড়ে আছে। টিকিট কাউন্টার, গুডস বুকিং রূম, গেস্ট রূম, ভিআইপি রূম, প্রথম শ্রেণির ওয়েটিং রূম, স্টেশনমাস্টার, সহকারী স্টেশনমাস্টারসহ সব কক্ষই তালাবদ্ধ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক সদস্য বলেন, রূপপুরের মালপত্র আনা-নেওয়ার জন্য স্টেশন থেকে যে রাস্তা রয়েছে, সেটি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচ দিয়ে। এই দিক দিয়ে আনা-নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। শুনেছি এজন্যই নাকি লোড-আনলোড হচ্ছে না।
ঈশ্বরদীর সিনিয়র সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম ববি সরদার বলেন, রুপপুর প্রকল্পের মালামাল পরিবহনের জন্য ঈশ্বরদী বাইপাস থেকে যে রুপপুর পর্যন্ত যে রেলপথ নির্মিত হয়েছে তা আজ পর্যন্তও তালাবদ্ধ। ২২ মাস পেরিয়ে গেলেও এই স্টেশনে কোন ট্রেন যাতায়াত করেনি, রেলের কোন আয়ও হয়নি। এটি আদৌ কোন কাজে ব্যবহৃত হবে নাকি দূর্নীতির একটি খাত তা খতিয়ে দেখা উচিত।
রাজিবুল আলম ইভান নামে একজন কলেজ শিক্ষক বলেন, পতিত সরকার রুপপুর প্রকল্পের মালামাল পরিবহনের জন্য রুপপুর রেলস্টেশ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত স্টেশনটির তালাই খোলা হলোনা। স্টেশনটি আসলেই কি কোন কাজে ব্যবহার হবে নাকি রেলওয়ে ও আওয়ামীলীগ সরকারের দূর্ণীতির একটি অংশ তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
পাকশি রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার(ডিআরএম) শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ জানান, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ ও ফুয়েল পরিবহনের জন্য ডুয়েল গেজ সম্পন্ন একটি রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কপথে যদি কোন অরাজকতা, হরতাল-অবরোধের কারনে সেগুলো পরিবহনে বিলম্ব হয় তবেই এই রেলপথের মাধ্যমে তা নিয়ে আসা হবে। মুলত এ কারনেই এই স্টেশনটি নির্মিত হয়েছে।