ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ড ও ভারতের ক্রাইম পেট্রলে ক্রাইমসিন দেখে পাবনার ঈশ্বরদীতে এক কিশোরকে হত্যার পর টুকরো টুকরো করে পলিথিনে ভরে রাখার ঘটনা ঘটেছে। নিখোঁজের ৭ দিন পর ট্রাংকে রাখা তার মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করে পুলিশ। ভুক্তভোগী ওই কিশোরের নাম তপু হোসেন (১৪)।
এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করে করা হয়েছে। আজ শনিবার (২২ জুন) ঈশ্বরদী সরকারী কলেজের পেছনে মশুরিয়াপাড়াস্থ অরণ্য ছাত্রাবাসের তিন তলার ৩০৫ নং কক্ষে থেকে রাত ৯টা ট্রাংক ভর্তি মরদেহের টুকরো উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত তপু ঈশ্বরদী সরকারী কলেজ সংলগ্ন খান মঞ্জিল সংলগ্ন এলাকার রিকশাচালক আবুল কাশেমের ছেলে।
নিহত তপুর বড় ভাই অপু বলেন, গত ১৫ জুন সকাল ১১টার দিক থেকে তার ছোটভাই তপুর ব্যবহারকৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ওইদিন রাত ১০ টার দিকে তপুর ফোন নম্বর থেকে জানানো হয় আপনার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। বিকাশে ৩০ হাজার টাকা না দিলে হত্যা করা হবে। তখন খরচসহ ৭ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তপুর ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এর পরের দিন থানায় গিয়ে আমার মা (মজিরণ বেগম) বাদী হয়ে নিখোঁজের জিডি করেন। এরপর আজ শনিবার পুলিশ মরদেহের খোঁজ পায়।
অপু আরও বলেন, স্থানীয়দের সঙ্গে পূর্ব শরুতার জের ধরেই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বন্ধুদের দিয়ে বাড়ির পাশের অরণ্য ছাত্রাবাসের তিন তলার ওই কক্ষে নিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ টুকরো টুকরো করে ট্রাংকে ভরে রেখে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়।
অরণ্য ছাত্রাবাসের ৩০৪ নং কক্ষে থাকা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী তানভির আহমাদ বলেন, ঈদের ছুটিতে আমি গত ১১ জুন বাড়িতে চলে যায়। শনিবার দুপুরের দিকে ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে ফিরি। দরজার কাছে আসলে ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। পাশের ৩০৫ নং কক্ষের ভেতর থেকে দরজা দিয়ে বের হওয়া রক্ত দেখতে পেয়ে মেসের আয়ার মাধ্যমে মালিকদের জানানো হয়। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে কক্ষের তালা খুলে ট্রাংকের ভেতরে রাখা মরদেহের টুকরো দেখতে পান।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নিহত তপু একই এলাকার কয়েকজন মাদকাসক্ত উঠতি বয়সী ছেলেদের সঙ্গে চলাফেরা করতো। স্থানীয় হাসুর দোকানে বসে সব সময় আড্ডা দিত। সম্প্রতি তপুও মাদক সেবন শুরু করেছিল। ঈদের আগে মাদক সেবনকে কেন্দ্র করেই হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
ঈশ্বরদী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত তপুর মা বাদী হয়ে থানায় গত ১৬ জুন একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এই জিডির সূত্র ধরেই তদন্ত করে সন্দেহজনক তিনজনকে আটক করা হয়।
আটককৃতদের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, আটককৃতরাসহ নিহত তপু মাদক সেবনকারী ছিল। মাদক সেবনকে কেন্দ্র করেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। তারা ক্রাইম পেট্রোলে ক্রাইম সিন দেখে ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকান্ডের মতো লাশ গুমের পরিকল্পনা মতে তারাও তপুকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে ট্রাংকে রেখেছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। আটককৃতদের দেওয়া তথ্য মতে আরও একজনকে আটকের চেষ্টায় অভিযান চালানো হচ্ছে। মরদেহের শনাক্তের জন্য ডিএনএ পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাবনা পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়া) আকবর আলী মুন্সি বলেন, হত্যার রহস্য উদঘাটনে সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করা হয়েছে। অহেতুক যেন কাউকে হয়রানি না করা হয় সেদিকে নজর রাখার জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত হত্যাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না।