নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে খোকন মালিথা (৪২) নামে পাবনার ঈশ্বরদীর এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার (১৮) দুপুরে পাবনার সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খোকন মালিথা ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের প্রতিরাজপুর গ্রামের মৃত রোস্তম আলী মালিথার ছেলে। রোস্তম আলী মালিথা ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে বাড়ির পাশের একটি খেজুরের বাগান থেকে খেজুরের রস খেয়ে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন খোকন মালিথা। পরিবারের লোকজন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এরপর তাকে রাজশাহীতে স্থানান্তর করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
খোকন মালিথার চাচা ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইসহাক আলী মালিথা বলেন, খেজুরের রস খেয়ে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় সে। এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল রাতে মারা গেছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আজ দুপুর ১২টার দিকে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে। তার মৃত্যুতে ঈশ্বরদী পৌরসভাসহ সর্বস্তরের মানুষ শোকাহত।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসমা ঢাকা পোস্টকে বলেন,খোকন মালিথা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বিষয়টি জানার পর তার বাড়িতে গিয়ে ও এলাকাবাসীসহ সবাইকে সচেতন করা হয়েছে। খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
পাবনার সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে খোকন মালিথার মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ঘটনাস্থলে আমাদের মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। মেডিকেল টিমের রিপোর্ট ঢাকায় পাঠাতে হবে।
তিনি বলেন, গত মাসে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মিটিংয়ে খেজুরের রস না খাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়াও খেজুরের রস না খাওয়ার জন্য মাইকিং, লিফলেটসহ সতর্ককরণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তারপরও কীভাবে তিনি রস খেয়েছেন সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।
নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ২২ জানুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোয়াদ হোসেন (৭) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এটিই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যু ছিল। শিশু সোয়াদ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের দিঘা গ্রামের মো. সানোয়ার হোসেনের ছেলে। সে দিঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। মৃত্যুর দুইদিন পর ঘটনা তদন্ত করতে ঈশ্বরদীতে এসেছিলেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। দিনব্যাপী তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এরপর তারা ঢাকায় ফিরে যান।