পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রমত্তা পদ্মা রুদ্ররূপ ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (মৎস্য সমিতির অফিস), বেশকিছু দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বসতবাড়ি থেকে নদী মাত্র ১০ মিটার দূরে অবস্থান করছে। এতে ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে ৫ নম্বর সাঁড়াঘাটের বাসিন্দাদের।
স্থানীয়রা জানায়, ব্রিটিশ আমলে দেশের অন্যতম নৌবন্দর ছিল সাঁড়া। পার্শ্ববর্তী ভারতসহ দেশ-বিদেশের বড় বড় জাহাজে মালামাল আসত এ বন্দরে। পাকশীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের পর এ নৌবন্দরের গুরুত্ব হারাতে থাকে। নৌবন্দরের পাকা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়। পাকশী ইউনিয়নের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে সাঁড়া ইউনিয়নের আরামবাড়িয়া পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার তীরের মধ্যে পাকশীর দুই কিলোমিটার ও সাঁড়ার পাঁচ কিলোমিটার তীরে বাঁধ রয়েছে। মাঝের ৫ নম্বর সাঁড়াঘাট এলাকার এক কিলোমিটারে বাঁধ নেই। পদ্মায় পানি বাড়লেই প্রতি বছর ভাঙন আতঙ্কে থাকেন এখানকার মানুষেরা।
ঘাটের দোকানদার স্বপন হোসেন বলেন, ‘আমরা অবহেলিত মানুষ। সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিরা এসে বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে যায়। কিন্তু মাত্র এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হয় না। দোকান রক্ষা করার জন্য বালির বস্তা ফেলে প্রায় লাখ টাকা খরচ করেও শেষরক্ষা হয়নি। এখন পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে দোকান। যে কোনো সময় দোকানটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।’ তিনি জানান, মাত্র ২০০ মিটার দূরেই ঈশ্বরদী ইপিজেড। সাঁড়াঘাটে বাঁধ না দিলে একসময় ভাঙন ইপিজেডে গিয়ে ঠেকবে।
সাঁড়াঘাট জেলেপাড়ার প্রধান অসিত হালদার জানান, নদীতে পানি বাড়লেই এলাকার বাসিন্দারা উত্কণ্ঠায় থাকেন। এখানকার মৎস্য সমিতির অফিস ও দোকানপাট নদীতে ভেঙে গেছে। বসতবাড়ি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে এসে বাঁধ নির্মাণের জন্য মাপাজোখ করেন, কিন্তু বাঁধ নির্মিত হয় না। জেলেপাড়ার মলিনা দাস বলেন, ‘নদীর যে গতিবিধি দেখছি এবার বসতবাড়ি ভেঙে যেতে পারে। ভাঙন আতঙ্কে আমাদের দুই চোখে ঘুম নেই।’
সাঁড়ার ইউপি সদস্য রফিক জানান, উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নদীর তীরে সাত কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। মাঝের এক কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নেই। এখানকার বাসিন্দারা অধিকাংশই জেলে ও দরিদ্র কৃষক। বাঁধ না নির্মাণ হলে ভাঙনে তাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। নিঃস্ব হবে হাজারো মানুষ। সাঁড়ার চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক রানা সরদার বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের একাধিক বার লিখিতভাবে জানিয়েছি।’ কিন্তু তারা এখনো দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, ভাঙনে এখানকার বেশকিছু দোকানপাট, মৎস্য সমিতির অফিস নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদী বসতবাড়ির কাছাকাছি চলে আসায় যে কোনো সময় বাড়িঘর ভাঙন শুরু হবে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী ফরহাদ হোসাইন বলেন, সাঁড়া ৫ নম্বর ঘাট এলাকার ভাঙনের বিষয়টি আমাদের জানা রয়েছে। এখানে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে। বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব তথ্য ঢাকা হেড অফিসে পাঠানো হয়েছে।