সন্তানের চোখের পানি ও আবেগাপ্লুত আকুতি কোনো কিছুই মন গলাতে পারেনি মায়ের। অবশেষে পা ধরে কেঁদেও মাকে ফেরানো গেলো না। পরকীয়া প্রেমের কাছে হেরে গেলো সন্তানের আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসা। অবশেষে মাকে নিতে না পেরে বাবার সঙ্গে কেঁদে কেঁদে বাড়ি ফিরলো ছেলে। এমন হৃদয় বিদারক ও স্পর্শকাতর ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার ঈশ্বরদী থানায়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামের মৃত আকাত প্রামানিকের ছেলে রুবেল প্রামানিক ও চরমিরকামারি গ্রামের আবুল কালাম প্রমানিকের মেয়ে মিতা খাতুন ১৮ বছর আগে বিয়ে করেন। ১৬ বছর বয়সী মিতুল নামে তাদের একটি পুত্র সন্তান আছে। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ভালোই কাটছিল রুবেল-মিতা দম্পতির সংসার।
৬ বছর আগে সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে মিতা ঈশ্বরদী ইপিজেডে তৈরি পোশাক কারখানা নাকানো কোম্পানিতে চাকরি নেন। ব্যবসায়ী রুবেল ও মিতার আয়ের টাকা সংসারের খরচ শেষে সঞ্চয় করার সিদ্ধান্ত নেন। খোলা হয় মিতার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। সেখানে প্রতি মাসেই দুজনই আয়ের টাকা জমা রাখতেন। চাকরির দুবছর পার হতেই রুবেল-মিতার সংসারে অশান্তি শুরু হয়। মিতার অসংলগ্ন আচরণে রুবেলের মনে সন্দেহের বাসা বাঁধে।
খোঁজ নিয়ে জানতে পারেনি একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিপ্লব নামে এক সহকর্মীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছেন মিতা। এ নিয়ে পরিবারে কলহের সৃষ্টি হয়। পারিবারিক বৈঠকে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। মিতা ওয়াদা করেন তিনি আর পরকীয়া সম্পর্কে জড়াবেন না। কিন্তু সে কথা মিতা রাখেননি। গোপনে পরকীয়া সম্পর্কে চালিয়ে যান।
২৪ জুন মিতা বাড়িতে থাকা রুবেলের ব্যবসার প্রায় লক্ষাধিক নগদ টাকা ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা ২ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হন। দু’দিন খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে অবশেষে স্বামী রুবেল ঈশ্বরদী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ১১ জুলাই পুলিশ ইপিজেড এলাকা থেকে মিতাকে থানায় নিয়ে আসে। খবর পেয়ে থানায় আসেন রুবেল প্রামানিক ও তার ছেলে মিতুল প্রামানিক। রুবেল প্রামানিক মিতাকে বলেন আমাদের একমাত্র সন্তানের কথা ভেবে তুমি সংসারে ফিরে এসো।
মিতা রুবেলকে সাফ জানিয়ে দেন তিনি তাকে তালাক দিয়েছেন। সংসারে আর ফেরার সুযোগ নেই। রুবেল মিতাকে ফেরাতে ব্যর্থ হলে তাদের সন্তান মিতুল প্রমানিক মায়ের পা ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং আকুতি-মিনতি করে বলে, মা তুমি বাড়ি চলো। তোমাকে চাকরি করতে হবে না। আমরা তো ভালোই আছি। কিন্তু ছেলের সে আকুতি কর্ণপাত করেননি মিতা। তিনি সাফ বলে দেন, ওই সংসারে আর ফিরবেন না। তাই ছেলে বাধ্য হয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বাবাকে নিয়ে থানা থেকে বের হয়ে যায়।
রুবেল প্রামানিক বলেন, সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে মিতাকে আবারো বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে বলছে আমাকে তালাক দিয়েছে। ছেলে খুব চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই তার মায়ের মন গলাতে পারলো না। ছেলে এখন বড় হয়েছে। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সেতো সব বোঝে।
রুবেলের দাবি, মিতা তার ব্যবসার এক লাখ টাকা ও ব্যাংকে রাখা দুই লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এ বিষয়ে মিতা বলেন, রুবেল প্রামানিককে তালাক দিয়েছি। তার সংসারে আর কখনো ফিরবো না। এখনো কাউকে বিয়ে করিনি।
জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল বলেন, রুবেল ও মিতা একত্রে যেন আবারো সংসার করতে পারে এজন্য রুবেলের ছেলেসহ তার স্বজনরা সমঝোতার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এতে মিতা রাজি না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। পরে মিতাকে তার বাবার হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, রুবেল প্রামানিক থানায় মিতার নিখোঁজের জিডি করেছিলেন। মিতাকে থানায় আনার পর রুবেল প্রামানিক ও তার ছেলে মিতুল প্রামানিক এসেছিল। তারা মিতাকে নিজ বাড়িতে নিতে আকুতি করেছিল। কিন্তু মিতা এতে সম্মতি দেননি।