► আট কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারকাজের ব্যয় ৬০ কোটি টাকা ► নির্ধারিত সময়ের এক বছর পরও কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে সাঁড়া ইউনিয়নের আড়মবাড়িয়া পর্যন্ত আট কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও সংস্কারকাজ চলছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আট কিলোমিটার সড়কের মধ্যে পাঁচ কিলোমিটারের কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যেই সড়কের দুই পাশের অন্তত দেড় শতাধিক স্থান ধসে গেছে।
আবার কাজে কারচুপি করায় বেশির ভাগ জায়গাতেই রোলার করা রাস্তার পাথর বের হয়ে গেছে। শহরের আলহাজ মোড় থেকে রেলগেট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের ড্রেনের কাজেও হয়েছে অনিয়ম। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ড্রেনকে কোথাও সরু, কোথাও প্রশস্ত করা হয়েছে। আবার কোথাও অবৈধ স্থাপনা রক্ষা করে আঁকাবাঁকা করা হয়েছে ড্রেন।
ফলে কমে গেছে রাস্তার প্রশস্ততা।
পাবনার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, ৫৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী-নাটোর-পাবনার আঞ্চলিক মহাসড়ক সম্প্রসারণ কাজ চলছে। কাজটি করছে ডন এন্টারপ্রাইজ ও মুজাহার এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড। এর মধ্যে মুজাহার এন্টারপ্রাইজ পাবনার ঈশ্বরদীর আলহাজ মোড় থেকে সাঁড়া ইউনিয়নের আড়মবাড়িয়া পর্যন্ত আট কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ করছে।
এই কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ২০২২ সালের ৪ মে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরেও এক বছর পার হয়ে গেলেও মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের গোকুলনগর থেকে আড়মবাড়িয়া পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কে নতুনভাবে কার্পেটিং করা হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সড়কের অন্তত দেড় শতাধিক স্থানে ইটের এজিং ভেঙে গর্ত তৈরি হয়েছে।
অন্তত ১০০ জায়গায় কার্পেটিং ভেঙে ২ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত গর্ত হয়েছে। যানবাহনচালকদের সাবধান করতে গর্তের পাশে ইট ও লাল নিশানা উড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
আড়মবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার, জহুরুল ইসলাম ও জীবন রহমান বলেন, রাস্তাটির কাজ শেষ হতে না হতেই পাথরের টুকরাগুলো উঠে গেছে। মূলত কাদাযুক্ত মাটির ওপর হালকা করে কার্পেটিং করা হয়েছে। রোলার করার পরও পাথরের টুকরাগুলো সমানভাবে বসেনি। এমনকি রাস্তায় থাকা ছোট ছোট গর্তগুলো ভরাট করা হয়নি। এসব কারণে রাস্তাটিতে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এতে বৃষ্টির পানি জমে দ্রুত ক্ষয়ে যাচ্ছে রাস্তা। ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই রাস্তার চলমান নির্মাণকাজ দেখার যেন কেউ নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা কোরবান আলী ও ফারুখ আহমেদ বলেন, পৌর শহরের আলহাজ মোড় থেকে রেলগেট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের ড্রেনের কাজেও ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ড্রেনকে কোথাও সরু, কোথাও প্রশস্ত করা হয়েছে। আবার কোথাও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবৈধ স্থাপনা রক্ষা করে সোজাসুজিভাবে ড্রেন না করে আঁকাবাঁকা করা হয়েছে। এতে সাপের আকার ধারণ করেছে ড্রেন।
ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা বলেন, ‘রাস্তার ড্রেন করার ক্ষেত্রে আমাকে কিছুই জানায়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তারা কেন ড্রেন আঁকাবাঁকা করে নির্মাণ করেছে—তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। তবে জনস্বার্থে ড্রেন সোজা করে নির্মাণ করে রাস্তাটির প্রশস্ততা ঠিক রাখা উচিত ছিল।’
নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুজাহার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সরকারি নিয়মে ও নকশা অনুসারে কাজ করছি।’
পাবনার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, ‘কাজের মান ভালো হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাউন্ডারি ওয়াল, টয়লেট, গ্যাস, পানির লাইনের কারণে ড্রেনটি আঁকাবাঁকা করা হয়েছে। কাজটি শেষ হতে আরো কয়েক মাস লাগবে।