আম-জাম-কাঁঠালসহ অন্যান্য মৌসুমি ফলের ভিড়ে কদর নেই পেয়ারার। খুচরা বাজারে ১৫-২০ টাকা এবং পাইকারি বাজারে ১০-১৫ টাকা কেজি দরেও পেয়ারা কেনার খদ্দের পাওয়া যাচ্ছে না। পেয়াড়ার উৎপাদন খরচ অপেক্ষা বাজার মূল্যে পার্থক্যের কারণে চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন ঈশ্বরদীর পেয়ারা চাষিরা। তা ছাড়া বর্ষা মৌসুমে পেয়ারার বাগানে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ এবং অবিক্রিত থাকার কারণে বাগানেই পচে যাচ্ছে পেয়ারা।
বাগান থেকে পেয়াড়া কিনে ভ্যানে ফেরী করে এবং বাজারের দোকানগুলোতে বিপুল পরিমাণ আমদানি হলেও ক্রেতা নেই। বিক্রি না হওয়ায় দোকানেও পচে যাচ্ছে পেয়ারা। চাষিদের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন লোকসানের মুখে। এ অবস্থার জন্য আম-জাম-কাঁঠালের বিপুল আমদানি ছাড়াও বাজার ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন চাষিরা। তাছাড়া দেশে চাহিদার তুলনায় বিপুল পরিমাণ উৎপাদন এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে কৃষকরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
তাই পেয়ারাকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস নেমেছে। লোকসানে চরম বিপর্যয়ের মুখে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন ঈশ্বরদীর কৃষকরা। হতাশায় প্রহর গুণছে এ অঞ্চলের সহস্রাধিক পেয়ারা চাষি। চাষিরা প্রকৃত মূল্য না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন। ফলন ভালো হলেও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে পেয়ারার ভরা মৌসুমেও বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
জাতীয় পদকপ্রাপ্ত পেয়াড়া চাষি আমজাদ হোসেন জানান, দুই মৌসুমে আষাঢ়ের মাঝামাঝি এবং শীতের পৌষ মাসে শুরু হয় পেয়ারার মৌসুম। বর্ষায় পোকা-মাকড়ের কারণে বাগানে বিপুল পেয়ারা নষ্ট হয়। এবারে আম-কাঁঠালের দাম অনেক কম থাকায় পেয়াড়া বিক্রি হচ্ছে না।
২২ বিঘা জমিতে পেয়ারার আবাদ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিক্রি না হওয়ায় বাগানেই অনেক পচে যাচ্ছে। বাগান থেকে মণপ্রতি ৪০০-৫০০ টাকা দরে পেয়ারা বিক্রি হলে কৃষক বাঁচবে কি করে।
দেশে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় অনেক বেষি পরিমাণে পেয়ারা উৎপাদন হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শ্রমিকের মজুরিই তো ৬০০-৭০০ টাকা। বাজার ব্যবস্থাপনা থাকলে এপরিস্থিতি হতো না।
কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ জানান, পেয়ার উৎপাদনের সঙ্গে ৪১ জন (উপাদান) জড়িত। জমি চাষ, চারা, শ্রমিক, সার, বিষ, কীটনাশক, দড়ি, বাঁশ, পলিথিন, জমির খাজনা ছাড়াও আরও কিছু উপাদান রয়েছে। এসব উপাদানের সঙ্গে জড়িতরা সবাই লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক। শ্রমিকের মজুরিসহ সকল উপকরণের দাম বেড়েছে। পেয়ার ছাত্রাকনাশক ৬০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা হয়েছে। ২৫ টাকা কেজিতে কৃষক পেয়ারা বিক্রি করতে পারলে লোকসান না হয়ে উৎপাদন খরচ ওঠবে। এর ওপরে বিক্রি করলে লাভ হবে। লোকসানের হাত হতে কৃষককে রক্ষা করতে হলে পরিকল্পনা মাফিক বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
উপলো কৃষি অফিসার মিতা সরকার জানান, ঈশ্বরদীতে ৩৬০ হেক্টর জমিতে পেয়ারার আবাদ রয়েছে। আম-কাঁঠালের মৌসুমে প্রতিবছরই পেয়ারার দাম কমলেও এবারে অস্বাভাবিকভাবে দাম কমেছে। আম-কাঁঠালের মৌসুম চলে গেলে দাম বেড়ে যাবে, তখন চাষিরা লাভের মুখ দেখবে।