ঈশ্বরদীর বেনারসি তাঁতশিল্পকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে সরকার ফতেমোহাম্মদপুর এলাকায় বেনারসি পল্লী গড়ে তোলে। ২০০০ সালে বেনারসি পল্লীর নির্মাণকাজ শুরুর পর ২০০৪ সাল থেকে তাঁতিদের মধ্যে প্লট বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয়। ১৯ বছর আগে প্লট বরাদ্দ পেলেও বেশিরভাগ তাঁতি এখনও কারখানা নির্মাণ করতে পারেননি। তারা জানান, পুঁজির (টাকার) অভাবে বেনারসি পল্লীতে নতুন করে কারখানা গড়ে তোলা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আর্থিক সুবিধা পেলে তারা চেষ্টা করবেন বেনারসি পল্লীকে জমজমাট করে গড়ে তুলতে।
জানা গেছে, বেনারসি পল্লীতে ৯০টি প্লটের মধ্যে মাত্র সাতটিতে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে চালু রয়েছে তিনটি, দুটি কারখানা বছরের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। তাঁতিরা জানান, সুতার দাম বেড়ে যাওয়া, ভারতীয় শাড়ির বাজার দখল, শ্রম-মজুরি কম হওয়াসহ আর্থিক সংকটে থাকার কারণে তাদের পক্ষে নতুন জায়গায় গিয়ে কারখানা গড়ে তোলা কঠিন। তাঁতিদের দাবি, বেনারসি পল্লীতে কারখানা স্থাপনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধা দিলে পল্লীটি জমজমাট করে তোলা তাদের পক্ষে সহজ হবে। বর্তমানে দরিদ্র তাঁতিরা ঝুপড়ি ঘরে কষ্ট করে তাঁত বুনে থাকেন। বেনারসি পল্লীতে কারখানা স্থাপনের সুবিধা পেলে তাদের অর্থনৈতিক উপকার হবে, পাশাপাশি পল্লীও জমজমাট হয়ে উঠবে বলে জানান।
ঈশ্বরদী বেনারসি কার্যালয় তথ্যমতে, ২০০৪ সালে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড ফতেমোহাম্মদপুরে সাড়ে পাঁচ একর জমিতে গড়ে তোলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেনারসি পল্লী। ২০ বছরে প্লটের কিস্তি পরিশোধের সুবিধার্থে ৯০ জন তাঁতিকে ৯০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে এরই মধ্যে একজনের প্লট বাতিল করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, প্লট বরাদ্দের শর্ত অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে কারখানা স্থাপনের নিয়ম থাকলেও ১৯ বছরে কারখানা নির্মাণ হয়েছে মাত্র ৮টি। আরও ৬-৭টি প্লটে কারখানা স্থাপনের জন্য ইটের দেয়ালের গাঁথুনি দেখা গেলেও সেগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। বেশিরভাগ প্লটে কারখানা গড়ে না ওঠায় পুরো পল্লী এখন ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।
ফতেমোহাম্মদপুর বেনারসি তাঁত মালিকরা বলেন, ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়। সুতার দাম বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকটসহ নানা সমস্যাতে বেনারসি তাঁতের ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। তারা আরও জানান, পাকিস্তান আমলে এখানে প্রায় ৪৫০টি বেনারসি তাঁত কারখানা ছিল। এ শিল্পে জড়িত ছিলেন প্রায় সাত হাজার মানুষ। ২০১৮ সালেও এখানে প্রায় ৩০০টি কারখানা ছিল। এখন মাত্র ৫০টি কারখানা চালু রয়েছে। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার কাপড়ের কারখানা জামান টেক্সটাইলের ম্যানেজার শরিফুল আলম বলেন, বেনারসি পল্লীতে সরকারিভাবে সুতা প্রসেসিং কারখানা স্থাপনের কথা থাকলেও তা হয়নি। শাড়িপ্রতি প্রায় এক হাজার টাকা খরচ করে ঢাকা মিরপুর থেকে সুতা প্রসেস করে আনতে হয়।
ফতেমোহাম্মদপুর চেয়ারম্যানপাড়ার সানজিদা শাড়ি কারখানার স্বত্বাধিকারী মো. নাসিম উদ্দিন টুটুল বলেন, ৩০০ কারখানা থেকে বন্ধ হয়ে ৫০টিতে ঠেকেছে। বরাদ্দ পাওয়া প্লটে কারখানা নির্মাণ করে অতিরিক্ত কোনো সুযোগ-সুবিধাও পাওয়া যাবে না। তাই তাঁতিরা বেনারসি পল্লীতে কারখানা স্থাপনের আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
ঈশ্বরদী প্রাথমিক বেনারসি তাঁতি সমিতির সভাপতি ওয়াকিল আলম বলেন, ফতেমোহাম্মদপুরের বেশিরভাগ তাঁতির বেনারসি পল্লীতে প্লট রয়েছে। কিন্তু প্লটে কারখানা নির্মাণের পুঁজি নেই। সরকার যদি প্লট অনুযায়ী কারখানা নির্মাণ করে দিত, তাহলে সবাই বেনারসি পল্লীর কারখানায় আসতে পারত।
ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার ওবাইদুর রহমান জিলানী বলেন, তাঁত বোর্ডের তালিকায় এ উপজেলায় ২০৬ তাঁতির নিবন্ধন রয়েছে। ২০২২ সালে ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জে সরকার তাদের ৪০ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়।