পাবনার ঈশ্বরদীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা দখল করে গড়ে ওঠেছে অবৈধ বালুর ব্যবসা। ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়াই রেল কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছে রমরমা এ বালুর ব্যবসা। বালুর স্তুপের কারণে বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত ও গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে ব্রিজের পিলার ও গাইড ব্যাংকের (রক্ষা বাঁধ) নিরাপত্তা।
জানা যায়, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে নদী তীরবর্তী বিশাল এলাকা কৃষিকাজের জন্য রেলওয়ে থেকে লিজ দেওয়া হয়। কিন্তু কৃষিকাজ না করে লিজ নেওয়া কৃষকদের থেকে ভাড়া নিয়ে সেখানে বালুর ব্যবসা চলে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং লালন শাহ সেতু হুমকির সম্মুখীন ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া স্বত্বেও থেমে নেই বালু উত্তোলন ও ব্যবসা। বরং বিশাল বালুর স্তুপের আড়ালে ঢাকা পড়েছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে ট্রাক-ট্রাক্টর আসছে ও বালু নিয়ে চলে যাচ্ছে। বালু বোঝাইয়ের পর নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাতে টাকা দিচ্ছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার ট্রাক বালু বিক্রি হয়। টাকার হিসেবে এসব ঘাট থেকে প্রতিদিন ২০-৩০ লাখ টাকার বালু বিক্রি হয়। ট্রাক প্রতি এবং বালুর ফুট হিসেব করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয়।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস এ বালু ব্যবসা শুরু করেন। পরে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও পাকশী নৌ-পুলিশ এসব দেখেও না দেখার ভান করেন। বরং তাদের সহযোগিতায় নির্বিঘ্নে চলে বালুর ব্যবসা।
রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিইএন-২) বীরবল মণ্ডল বলেন, পদ্মা নদীর পানি প্রবাহ মূলত আপস্ট্রিমের পানি প্রবাহ। বৃটিশরা যখন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ তৈরি করে ব্রিজ রক্ষার জন্য রক্ষা বাঁধ (ব্যাংক গাইড) আপস্ট্রিমে অনেক দূর পর্যন্ত করেছে। এখন বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গাইড ব্যাপক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এতে কেউই গুরুত্ব দিচ্ছে না। একে পদ্মা নদীর নাব্যতা কমেছে। আর এভাবে চললে ব্রিজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সূফি নূর মোহাম্মদ বলেন, বালুর ওই জায়গা রেলের। আমাদের ভূসম্পত্তি অফিস এসব জমি দেখাশোনা করে। এ বিষয়ে তাদের বলেছি। এছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালীরা বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। তাদেরকে বালু সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সরিয়ে না নেওয়া হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) টিএ রাহসিন কবীর বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আশেপাশের এলাকা কেপিআইভূক্ত। এই এলাকায় বালুমহাল বা ব্যবসার সুযোগ নেই। ঈশ্বরদীতে স্বীকৃত কোনো বালুমহাল নেই।