পাবনার ঈশ্বরদীতে তিন হাজার অসহায় উপকারভোগীর ভাতা ও উপবৃত্তির টাকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত এক সপ্তাহে প্রতারক চক্র ঈশ্বরদীতে প্রায় তিন হাজার বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা এবং উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া এসব টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, ঈশ্বরদী পৌর এলাকা ছাড়াও সাঁড়া, লক্ষীকুন্ডা, সাহাপুর, পাকশী, মুলাডুলি, সলিমপুর ও দাশুড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। তিন মাস পর পর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের ভাতা দেওয়া হয়। ভাতার টাকার আশায় এবারেও গ্রামের গরিব ও অসহায় মানুষ মোবাইলে মেসেজ চেক করেন। টাকা না আসায় খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন, টাকা পাঠানো হয়েছে, কিন্তু প্রতারক চক্র টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্যাংকের কর্মকর্তা, শিক্ষক পরিচয়ে তারা ফোন করে কৌশলে বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর জেনে নিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছে।
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়ার মায়ের কাছে শিক্ষক পরিচয় দিয়ে ফোন করে বলা হয়, তার মেয়ের বৃত্তির টাকা বিকাশের মাধ্যমে দেওয়া হবে। মেয়ের বৃত্তি পরীক্ষার রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ কিছু তথ্য নিয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্টে ২৩ হাজার ৫০০ টাকা জমা রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীর মা টাকা জমা দেওয়ার পরপরই প্রতারক চক্র সে টাকা তুলে নিয়ে ফোন বন্ধ করে দেয়।
একইভাবে চক্রটি প্রতিবন্ধীদের টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছে। সাহাপুরের পাকুড়িয়ার দুলাল হোসেন ও তার ছেলে রনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। অসহায় এই বাবা-ছেলের তিন মাসের ২ হাজার ৫৫০ টাকা তুলে নিয়েছে প্রতারক চক্র।
ভুক্তভোগী দুলাল হোসেন বলেন, দুই দিন আগে এক ব্যক্তি ফোন করে বলে, নগদ অফিস থেকে বলছি, আপনার মোবাইলে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা পাঠানো হবে। পিন নম্বরটা বলেন। সরল বিশ্বাসে তিনি অন্য একজনের মাধ্যমে তাকে পিন নম্বর দেন। পরে স্থানীয় একটি দোকানে টাকা তুলতে গেলে দোকানদার জানান, মোবাইলে কোনো টাকা নেই।
প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন ও মানবাধিকার সমিতির সভাপতি সানোয়ার হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহে সাড়ে তিন হাজার প্রতিবন্ধীর টাকা প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে। টাকা হারিয়ে অসহায় প্রতিবন্ধীরা কান্নাকাটি করছেন।
ঈশ্বরদী থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। ভাতাভোগীদের এ বিষয়ে সচেতন থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, ঈশ্বরদীতে সাড়ে ৪ হাজার প্রতিবন্ধীসহ প্রায় ১২ হাজার ভাতাভোগী রয়েছেন। প্রতারণার বিষয় উদঘাটন করতে আমরা চেষ্টা করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ বলেন, বিষয়টি ঈশ্বরদী থানা ও পাবনা র্যাবকে জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কাজ শুরু করেছে।
সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক, ২৬ জুন ২০২৩