বাজারে আসতে শুরু হয়েছে মিষ্টি সুস্বাদু লাল ঠসঠসে বোম্বে লিচু। ফলন কম হলেও ভালো দাম পেয়ে লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা খুশি। স্থানীয় হাটবাজারে বোম্বে লিচুতে সরগরম হয়ে উঠেছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ট্রাকবোঝাই করে লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। চলতি মৌসুমে প্রায় ৫২৫ কোটি টাকার লিচু বিক্রির প্রত্যাশা করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার।
এদিকে চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে লিচুর মুকুল কম আসার পাশাপাশি তীব্র দাবদাহে এর গুটি ঝরে পড়ে। দাবদাহ চলা অবস্থায় পাকার আগে ও পরে অনেক গাছেই লিচু ফেটে শুকিয়ে নষ্ট হয়েছে। তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও চাষিদের অভিজ্ঞতার আলোকে নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন উপায়ে লিচু রক্ষার চেষ্টা করা হয়।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ রয়েছে। উপজেলার সলিমপুর, সাহাপুর, পাকশী, দাশুড়িয়া, মুলাডুলি ও লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকাসহ সব মিলিয়ে বাগানের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৬০টি। গাছ রয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার। প্রতিটি গাছে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার লিচু ধরে। এখানকার মাটি লিচু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ৩০ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ হয়ে আসছে।
উপজেলার ছলিমপুরের জয়নগর শিমুলতলা, জয়নগর বিশ্বরোড মোড়, মিরকামারী মুন্নার মোড়, সাহাপুর ইউনিয়নের ছিলিমপুর, বাঁশেরবাদা, আওতাপাড়া, দাশুড়িয়া বাজার, মুলাডুলিসহ লিচুর বিভিন্ন হাটবাজার লিচুতে ভরে গেছে।
লিচু চাষিরা জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, মাগুরা, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতারা ঈশ্বরদীতে এসেছেন লিচু কিনতে। দেশের বিভিন্ন এলাকার লিচু ব্যবসায়ী আগে থেকেই লিচু বাগান কিনে নিজেরাই দেখাশোনা করেছেন। তারা এখন গাছ থেকে পেরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
শুক্রবার সকালে সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর শিমুলতলায় লিচু হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাট বোম্বে লিচুতে সরগরম। চারদিকে লাল রঙের লিচু আর লিচু। সারিবদ্ধভাবে লিচু ডালায় সাজিয়ে বিক্রিতে ব্যস্ত চাষিরা। চায়না-৩ লিচুও দুয়েকজনকে বিক্রি করতে দেখা যায়। প্রতি হাজার বোম্বে লিচু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। খুচরা ১০০টি লিচু চাওয়া হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। চায়না-৩ প্রতি হাজার বিক্রির জন্য বিক্রেতা দাম হাঁকছেন ২ হাজার ৫০০ টাকা। এই লিচু তিন-চার দিন পর ৪ হাজারের ওপরে বিক্রি হবে বলে জানান মুলাডুলির চাষি জাহিদুল ইসলাম। দেশি লিচু প্রতি হাজার ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শিমুলতলা লিচু হাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও আড়তদার আদর্শ ফলভান্ডারের মালিক লিটন প্রামাণিক বলেন, গত দুই দিন থেকে দেশের বিখ্যাত ও সুস্বাদু বোম্বে লিচু হাটে ওঠা শুরু হয়েছে। চায়না লিচুও আসছে। দেশি লিচুর চেয়ে বোম্বে ও চায়না লিচুর দাম বেশি। খেতেও সুস্বাদু। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার লিচু শুধু শিমুলতলা হাট থেকেই বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লিচু বাগান, সাহাপুর, আওতাপাড়া, দাশুড়িয়া, মুলাডুলির হাট এবং উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন কোটি টাকার ওপরে লিচু বিক্রি হচ্ছে। ভোর ৪টা থেকে হাটের কার্যক্রম শুরু হয়ে চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে লিচুর কেনাকাটা শেষ হয়ে যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, লিচু এ এলাকার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফল। বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করে এখানকার মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। দেশব্যাপী ঈশ্বরদীর লিচুর আলাদা কদর রয়েছে। এখানে ২ লাখ ৮০ হাজার লিচুগাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার পর্যন্ত লিচু ধরে। এবার মুকুল কম আর বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলন কম হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে কিছু গাছ থেকে গুটি ঝরে পড়া ও কিছু লিচু ফেটে নষ্ট হয়েছে। এরপরও সামগ্রিকভাবে লিচুর বাজারমূল্য হবে ৫০০ থেকে ৫২৫ কোটি টাকা।