ঈদুল ফিতর সামনে রেখে খট খট শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে পাবনার তাঁতপল্লিগুলো। লুঙ্গি-গামছার সঙ্গে চাহিদা বেড়েছে কাতান ও বেনারসি শাড়ির। সেখানে কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তাঁতিরা।
পাবনায় তাঁতশিল্পের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য রয়েছে। জেলা সদর, সুজানগর, আটঘরিয়া ও বেড়া উপজেলার বেশ কিছু গ্রামে রয়েছে হ্যান্ডলুম ও পাওয়ার লুম তাঁত। এসব গ্রামে তৈরি হচ্ছে শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন হাজারো মানুষ। এ ছাড়া ঈশ্বরদীর ফতেমোহাম্মদপুর লোকোশেড এলাকা পরিচিত হয়ে উঠেছে বেনারসিপল্লি নামে। এখানে তৈরি হচ্ছে বেনারসি, কাতান ও জরি-চুমকির শাড়ি। এসব শাড়ির চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।
তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে রং-সুতার দাম চড়া। একের পর এক বন্ধ হচ্ছিল তাঁত। করোনাকালে এই পরিস্থিতি আরও চরম আকার ধারণ করেছিল। কর্মব্যস্ত তাঁতপল্লিগুলো হয়েছিল নীরব-নিথর। অনেকে তাঁত বন্ধ করেছিলেন, অনেকে বদলেছিলেন পেশা। করোনা-পরবর্তী সময়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করেন তাঁতিরা। কিন্তু উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ায় এর চাহিদা ছিল কম। কিন্তু আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সেই পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসের শুরু থেকেই তাঁতপণ্যের চাহিদা বেড়েছে। ফলে এখন রাত-দিন কাজ করতে হচ্ছে তাঁতিদের।
গত বুধবার উপজেলার ঈশ্বরদীর ফতেমোহাম্মদপুর ঘুরে দেখা যায়, খট খট শব্দে মুখর। ফতেমোহাম্মদপুরে তৈরি হচ্ছে শাড়ি। হ্যান্ডলুম তাঁত ঘরে ব্যস্ত তাঁতিরা। হাত-পা চলছে সমানতালে। কথা বলার সময় নেই তাঁদের।
কর্মব্যস্ত তাঁতিরা জানান, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় প্রতি ঈদে তাঁতপণ্যের চাহিদা কিছুটা বেশি থাকে। তবে করোনার পর এই ঈদেই প্রথম চাহিদা বেড়েছে। অন্য সময়ে প্রতিটি তাঁতে সপ্তাহে একটি করে শাড়ি তৈরি করতেন। এখন অন্তত তিন থেকে চারটি শাড়ি তৈরি করতে হচ্ছে।
জালালপুর তাঁত কারখানার মালিক বুলবুল হোসেন বলেন, আগে তাঁর ৪০টি তাঁত ছিল। করোনার সময় সব কটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আস্তে আস্তে সেগুলো আবার চালু করতে শুরু করেছেন।
আজিজুল হাকিম নামের এক তাঁতি বলেন, তাঁর ২৪টি তাঁতের মধ্যে ১২টি তাঁত পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ঈদ সামনে রেখে চাহিদা বাড়ায় আবার সেগুলো চালু করেছেন। রং-সুতার দাম যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে আবার তাঁতিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
বেনারসিপল্লির তাঁতশ্রমিক আরমান ও জাহিদ আনোয়ার বলেন, তাঁরা কেবল বেনারসি শাড়ির বুনন জানেন। তাই কষ্ট হলেও এই পেশাতেই থাকতে হয়। করোনাকালে বেকার ছিলেন। পরে প্রতি চার-পাঁচ দিনে একটি করে শাড়ি তৈরি করে এক হাজার টাকা করে পাচ্ছিলেন। বর্তমানে শাড়ির চাহিদা বেড়েছে। রাত-দিন কাজ করছেন। সপ্তাতে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় হচ্ছে।
বেনারসিপল্লি তাঁত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওকিল হোসেন বলেন, ‘বাজারে আমাদের শাড়ির চাহিদা আছে। কিন্তু রং ও সুতার দাম বাড়ায় শাড়ির দাম বেড়ে যাচ্ছে। এই সুযোগে ভারত থেকে মেশিনে বোনা মানহীন শাড়ি বাজারে ঢুকছে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। রং-সুতার দাম কমানো ও ভারতীয় শাড়ি আমদানি বন্ধ হলে দেশের তাঁতিরা আবার ঘুরে দাঁড়াবেন।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের ঈশ্বরদীতে দায়িত্বরত কর্মকর্তা খন্দকার ওবাইদুর রহমান জিলানী বলেন, করোনার ক্ষতি পোষাতে তাঁতিদের প্রণোদনা ও ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রং-সুতার মূল্যবৃদ্ধিতে তাঁরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে সামনে দুটি ঈদ, দুর্গাপূজা ও পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে তাঁতপল্লিতে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।