দীর্ঘ তিন বছরের গভীর প্রেম, স্বামী স্ত্রীর পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস অতঃপর প্রেমিকার থেকে নগদ অর্থ হাতিয়ে লাপাত্তা হওয়া প্রেমিককে হাতে পেয়ে বিয়ের দাবিতে লোক সম্মুখে থানায় জেতে বলেন প্রেমিকা রুপা। প্রেমিক শাওন থানায় যেতে অস্বীকার করলে তাকে টানা হেঁচড়া শুরু করেন প্রেমিকা। সেখানে শাওনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরনে উপস্থিত জনতা গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন লম্পট শাওনকে।
মঙ্গলবার ( ২১ মার্চ ) রাত আনুমানিক সাত টার দিকে ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত প্রেমিক নুরুল ইসলাম শাওন ঈশ্বরদী পূর্বটেংরি ঈদগাহ রোড এলাকার মো. শহীদুল ইসলামের ছেলে এবং ঈশ্বরদী পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
ছাত্রলীগের নেতা হওয়ায় থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার অ্যাকশনে না গিয়ে অভিযোগ কারীর কথায় কর্ণপাত না করে তাদের থানা থেকে বের করে দিয়েছে ওসি। ভিকটিম রুপার এমন অভিযোগ কে উড়িয়ে দিয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, রুপা থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি। পারিবারিকভাবে এ বিষয়টি নিষ্পত্তি করবেন বলে থানা থেকে চলে গেছে। অভিযোগ না থাকায় শাওনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং রুপার ভাষ্যমতে, ঈশ্বরদী ইপিজেডে চাকরির সুবাদে নাটোরের সিংড়া এলাকার মেয়ে রুপার সাথে তিন বছর আগে পরিচয় হয় ঈশ্বরদী পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাওনের। সেই পরিচয়ের জের ধরেই প্রেমে পরেন তারা। সম্পর্ক গভীর হলে দুজনে ঘুরতে যান দাশুড়িয়ার একটি কাগজ মিলে। সেখানেই প্রথম জোরপূর্বক রুপাকে ধর্ষণ করেন লম্পট শাওন।
ধর্ষিতা রুপা থানায় ধর্ষনের অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নিলে শাওনের বাবা শহিদুল ইসলাম, মা ও বোনসহ রুপাকে তাদের ছেলের সাথে রুপার বিয়ে দেবেন শর্তে অভিযোগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন রুপা। পরিবারের আশ্বাসে রুপা আর শাওনের অবাধ মেলা মেশার জোয়ার বইতে থাকে। নানা টানপোড়নে আবারো ফাটল ধরে তাদের সম্পর্কে। এবার রুপাকে বশ করতে শাওনের বাবা মা তাকে তাদের ঈদগাহ রোডের বাড়িতে নিয়ে তোলেন। সেখানেই বিবাহ বাদেই দুই মাস ছেলে মেয়েকে অবাধ মেলা মেশার সুযোগ করেদেন শাওনের পরিবার। বিষয়টি নিয়ে রুপা বাধা দিলে বাধে বিতন্ডা। সে সময় রুপা শাওনের বাড়িতেই গলায় দঁড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিয়ন্ত্রনের বাইরে ভেবে ঈশ্বরদীর নারী নেতৃদের সহযোগিতায় ছাত্র লীগের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে রুপাকে ২ মাসপর বাড়ি থেকে বের করে দেন শাওনের পরিবার। ভিকটিম আবারো আইনের শরনাপন্ন হওয়ার চেষ্টা করলে শাওন কৌশলে তাদের বিশেষ মূহুর্তের সময় তৈরি করা ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেবে বলে হুমকি দিতে থাকে। সেই হুমকি আর পুনঃরায় বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে রুপাকে বিয়ে করবে বলে ব্যাবসার জন্য কিছু টাকা দাবি করেন শাওন। রুপা তার সর্বস্ব বিক্রি করে শাওনের ব্যবসার জন্য টাকা দিয়েও শেষ বারের মত সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হন। নিরুপায় রুপা সবকিছু হারিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা শাওনকে খুঁজতে থাকে শহরের আনাচে কানাচে। অতঃপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রেলগেট সংলগ্ন বাস টার্মিনালে শাওনকে পেয়ে বিয়ের দাবিতে তারসাথে বিতন্ডা বাধে। সে সময় শাওন রুপাকে মারধোর করতে থাকলে উপস্থিত জনতা শাওনকে উত্তম মাধ্যম প্রহার করে পুলিশ হেফাজতে দেন।
জানতে চাইলে লম্পট শাওনের বাবা মো. শহিদুল ইসলাম তাদের বাড়িতে রুপার থাকা এবং শাওনের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমার বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে রুপা ছিল। তবে তার ঘরে বাইরের ছেলেদের আনাগোনার কারনে আমরা তাকে বের করে দিয়েছি। তবে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ছেলেদের থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়াটা তার পেশা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত শাওনের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা রয়েছে ।