শুক্রবার , ১০ মার্চ ২০২৩ | ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. নির্বাচন
  14. পাবনা
  15. ফিচার

ভারতের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ঈশ্বরদীর শেফালীর নকশিকাঁথা

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
মার্চ ১০, ২০২৩ ৬:৫৩ অপরাহ্ণ

অভাবের সংসারে পুরোনো শাড়ি আর টুকরো কাপড় জোগাড় করে জোড়াতালি দিয়ে সন্তানদের বাহারি জামা তৈরি করে দিতেন শেফালী। তার তৈরি শিশুদের জামা প্রতিবেশীদের নজর কাড়ে। প্রতিবেশীরাও তাদের সন্তানদের জন্য জামা তৈরি করতে ভিড় জমাতে থাকেন শেফালীর বাড়িতে।

এভাবেই হাতে সেলাই করা জামা তৈরির মাধ্যমেই শুরু হয় শেফালীর জীবনের নতুন অধ্যায়। এরপর উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ও বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় ছয় মাস নকশিকাঁথা, পুঁথি, সেলাইসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শেষে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন শেফালীর তৈরি নকশিকাঁথাসহ বিভিন্ন পণ্য ঢাকার অভিজাত শপিংমলের পাশাপাশি ভারতের বাজারেও বিক্রি হচ্ছে।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের মাসুম আলী সরদারের স্ত্রী শেফালী খাতুন (৪৫)। গত ১১ বছরে প্রায় এক হাজার ২০০ নারীকে সেলাই ও নকশিকাঁথা তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বর্তমানে উপজেলার ছয়টি গ্রামে কেন্দ্র খুলে নকশিকাঁথা, বিছানার চাদর, পাপোশ, থ্রি-পিস তৈরির কাজ করান। ছয় হাজার টাকা মাসিক মজুরির ভিত্তিতে প্রায় ৪০০ নারী এসব কেন্দ্রে কাজ করছেন।

মানিকনগর গ্রামে শেফালীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনশেড বাড়ির প্রবেশপথে ব্যানারে লেখা ‘শেফালী হস্তশিল্প’। বাড়িতে ঢুকেই চোখে পড়লো বারান্দায় নারীদের সঙ্গে নিয়ে শেফালী নকশিকাঁথা, বেডশিট ও পাপোশ তৈরির কাজ করছেন। বারান্দায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নকশিকাঁথা, বেডশিট, কুশন কভার, গায়ের চাদর, পাপোশ, ব্লকসহ হাতে তৈরি নানা কারুকাজের পণ্যসামগ্রী।

শেফালী খাতুন বলেন, আমার স্বামী একসময় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। তার স্বল্প আয় দিয়ে সাত সদস্যের সংসার চালানো খুবই কষ্ট হতো। অভাবের সংসারে শিশুসন্তানদের হাতে সেলাই করে জামা তৈরি করে দিতাম। পাশাপাশি প্রতিবেশী শিশুদের জামা তৈরি করে বাড়তি যে আয় হতো তা সংসারের কাজে খরচ করেছি। ২০১১ সালের দিকে উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিই। পরবর্তীকালে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে যশোরে ছয় মাস নকশিকাঁথা সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিই। ২০১২ সালে গ্রামের চার শতাধিক নারীকে নিয়ে গড়ে তুলি ‘বিত্তহীন মহিলা সমবায় সমিতি’। এ সমিতির মাধ্যমে নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে সেলাইয়ের কাজ ও সমিতির সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে সদস্যরা ফ্রিজ, টেলিভিশনসহ সংসারের আসবাবপত্র কিনছেন। এমনকি অনেকেই জমিও কিনেছেন।

তিনি বলেন, আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা-মা বিয়ে দিয়েছিল। পড়াশোনা করতে পারিনি। নিজের পড়াশোনা না করার দুঃখ ঘোচাতে আমার তিন ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়েছি। আমার স্বামী রডমিস্ত্রির কাজ ছেড়ে এখন নকশিকাঁথাসহ বিভিন্ন পণ্য বাজারজাতকরণের কাজ করছেন। ছেলেমেয়ে, শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই এ কাজে আমাকে সহযোগিতা করেন। আমার তৈরি নকশিকাঁথা ও চাদর ঢাকার বড় বড় শপিংমলে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানে নকশিকাঁথা ও বেডশিট বিক্রি হচ্ছে।

শেফালী আরও বলেন, আমার স্বপ্ন দরিদ্র ও অসহায় নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ শিখিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা। পাশাপাশি নিজ বাড়িতে একটি কুটিরশিল্প কারখানা গড়ে তুলতে চাই। যাতে প্রশিক্ষিত এসব নারী এখানে কাজ করে জীবিকানির্বাহ করতে পারেন।

শেফালীর মেয়ে মেঘলা খাতুন বলেন, মা আমাদের পরিবারের সচ্ছলতা এনেছেন। একসময় খুব কষ্টে আমাদের দিনযাপন করতে হতো। মা নকশিকাঁথা, বেডশিট, পাপোশসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি ও নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জন করেন তা দিয়ে এখন আমাদের সংসার খুব ভালো চলছে।

শেফালীর স্বামী মাসুম আলী সরদার বলেন, বিয়ের পর বেশ কিছুদিন আমাদের অর্থকষ্টে দিন কেটেছে। শেফালী সেলাই ও হস্তশিল্পের কাজ শুরুর পর থেকে সংসারে সচ্ছলতা আসে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের সব খরচ এখন হস্তশিল্পের ব্যবসা থেকে চলে। শেফালির তৈরি নকশিকাঁথা ও বেডশিট চুয়াডাঙ্গা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ভারতের কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহরে পাঠানো হয়। ভারতে এখানকার নকশিকাঁথার বেশ চাহিদা আছে। গত ১০ বছরে প্রায় ৩০ হাজার নকশিকাঁথা ভারতে বিক্রি হয়েছে। একই সঙ্গে বেডশিট ও পাপোশ বিক্রি হয়।

মানিকনগর মধ্যপাড়া এলাকার গৃহবধূ শিরিনা খাতুন বলেন, শেফালী ভাবির কাছ থেকে নকশিকাঁথা তৈরির কাজ শিখে এখন নিজেই তৈরি করছি। কাঁথা বিক্রির টাকা সংসারে নানা কাজে খরচ করছি। এটা-ওটা কিনতে স্বামীর কাছে টাকা চাইতে হচ্ছে না। পরিবারেও সচ্ছলতা এসেছে।

গৃহবধূ তিয়া খাতুন বলেন, এখানে হস্তশিল্পের কাজ শেখার পর সংসারের অভাব দূর হয়েছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগানোর পাশাপাশি এ টাকা দিয়ে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল কিনে লালনপালন করতে পারছি।

মানিকনগর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন রুমি বলেন, শেফালীর হাত ধরে এ এলাকার শতশত নারী এখন স্বাবলম্বী। এলাকার বাসিন্দা হিসেবে এটি আমাদের জন্য গর্বের। শেফালীর সহযোগিতায় আরও বহু নারীর স্বপ্ন পূরণ হবে বলে আশা করছি।

সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা বলেন, শেফালী খাতুন এলাকার নারীদের হস্তশিল্প ও সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলছেন। ইউনিয়ন পরিষদে কোনো প্রয়োজনে এলে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করি।

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

আপনার জন্য নির্বাচিত

দুঃখিত,এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি করা নিষিদ্ধ